মেট্রো নিউজ, চাটমোহর (পাবনা) : চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে সড়ক পথে ৭ কিলোমিটার দূরের ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা বাজার। সামনে গুমানী-করতোয়া নদীর সংযোগস্থল মির্জাপুর হাট। সেখান থেকে নদীপথে ২ কিলোমিটার গেলেই নিরিবিলি একটি গ্রাম ‘বেলগাছি’।
মৃৎশিল্পের এই গ্রামটি শুধু চলনবিলেই নয়, পরিচিত সারাদেশেই। আর সে সুখ্যাতি এনে দিয়েছিলেন একসময় বেলগাছির মৃৎশিল্পীরাই। কালের রথচক্রে মৃৎপাত্র কদর হারাল। তবে সেইসব শ্রমী মৃৎশিল্পীরা বসে থাকলেন না। আবার গ্রামটিকে প্রতিমা তৈরির গ্রাম হিসাবে সুনাম এনেদিলেন। এখন গ্রামটি প্রতিমা তৈরির গ্রাম হিসাবে এক ডাকে চেনেন সবাই। আর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দূর্গোৎসব এলেতো কথাই নেই। যেন আরো বেড়ে যায় গ্রামখানির কদর।
আর মাত্র ছয় দিন। মহাষষ্ঠীর ষষ্ঠাদিকল্পরাম্ভ সমাপনান্তে মহাষ্টমীর দিনে দুর্গতিনাশিণী দেবীদূর্গা মন্দিরাসনে আরোহণ করবেন। দেবী এবার গজে আরোহণ করে মর্ত্যরে ভক্তদের মাঝে হাজির হবেন। পালপাড়া থেকে ইতিমধ্যেই প্রতিমা চলে এসেছে মন্দির আঙ্গিনায়। তার আগে বেলগাছির পালপাড়ায় মৃৎশিল্পীদের শৈল্পিক আনন্দঘন পরিবেশে ছিল এসব প্রতিমা। ভক্তি আর শিল্প সাধনায় দেবী সেখানে স্মরিত হয়েছেন।
কথা হয় বেলগাছি গ্রামের প্রতিমা শিল্পী বিমল, অপূর্ব ও ফণিন্দ্রনাথ এর সঙ্গে। ৪০ বছর ধরে প্রতিমা গড়ছেন তারাসহ এই গ্রামের ২০ টি পরিবার। তারা বলেন, ‘আগে হাঁড়ি-পাতিলসহ সব গৃহস্থালি তৈজসপত্র নামকরা ছিল এ গ্রামের। এখন মাটির জিনিস তেমন আর চলে না। তাই এই প্রতিমা তৈরির কাজটিই প্রধান হয়ে গেছে।’
মৃৎশিল্পী বিমলচন্দ্র পাল বলেন, ‘প্রতি বছর চলনবিল এলাকার পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলার প্রায় ৬০/৭০ টি ছোটবড় মন্দিরের দূর্গা প্রতিমা এই বেলগাছি গ্রামে তৈরি হয়। আমাদের প্রতিমার কদর আছে। তাই অনেক দূর হলেও আসেন সবাই। দামটাও আমরা শহরের চেয়ে কম নেই।’
ফণিন্দ্রনাথ পাল বলেন, ‘কার্তিক মাস এলেই আমরা প্রতিমা তৈরির মাটি, খড়সহ যাবতীয় উপকরণ সংগ্রহ করে কাজ শুরু করি। তিনি বলেন, এখনতো মাটি কিনতে হয়। আগে এমনি মিলতো। সেদিনতো এখন আর নেই। এখন সবকিছুই কিনতে হয়।’
বৃদ্ধ শ্যামল চন্দ্র পাল বলেন, ‘৪০ বছর আগে আমিই প্রথম প্রতিমা তৈরির কাজটি শুরু করেছিলাম এ গ্রামে। তারপর আমার দেখাদেখি গ্রামের সকলেই এখন প্রতিমা বানাচ্ছে। স্বচ্ছলতাও এসেছে সকলেরই। তিনি আরও বলেন, আমাদের ধর্মের সব ধরনের প্রতিমাই আমরা এখানে গড়ি।’
৭৮ বছর বয়সের এ গ্রামের প্রথম প্রতিমা শিল্পী শ্যামলচন্দ্র পাল বলেন, ‘কাজের ধরন ও চাহিদা অনুয়ায়ী ছোট বড় গড়ে প্রতি সেট (দূর্গা, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশ, লক্ষী ও অসুর) প্রতিমা বানাতে এখন পারিশ্রমিক বাদে খরচ হয় ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর আমরা সে গুলো বিক্রি করি প্রতিসেট ১৩ থেকে ২০ হাজার টাকা।’
চাটমোহর পৌরসভার দেলবেদীতলা সার্বজনীন মন্দির কমিটির সভাপতি কমলকান্ত রায় ও সম্পাদক তরুন কুমার কর্মকার বলেন, ‘আগে আমরা মন্দিরেই শিল্পীদের এনে প্রতিমা তৈরি করাতাম। এখন বেলগাছি গ্রাম থেকে বানিয়ে আনি।’ তারা বলেন, ‘এবার একসেট ১৫ হাজার টাকা দাম পড়েছে। আর আনা খরচ পড়েছে ২ হাজার টাকা।’
দোলবেদীতলা রায় মোবাইল গ্যালারির রনি রায় বলেন, ‘শহরে প্রতিমার উপকরণ এর দাম বেশি পড়ে। আবার সবকিছু মিলানো যায় না। তাই বাধ্য হয়েই এখন বেলগাছি থেকে প্রতিমা বানিয়ে আনতে হয়।’