কবি আশরাফুল মোসাদ্দেক এর ছ ক্ কা

অপেক্ষা এবং প্রতীক্ষা

রূপালি অন্ধকারের উদরে তন্তু ছেঁড়া বিশ্বাস
ছলকায় বেনোজলে জলজ অবিশ্বাস
কোলাহলের সলতে জ্বলে জ্বলে নিভে গেছে
মঞ্চে ঝরে আছে ব্যবহৃত তুচ্ছ শতরঞ্জি

সারারাত শীতরাত টোকা দেয় জানালায়
শেকলবন্দী শহরের ভীতু দরোজাগুলো
নৈঃশব্দের বুকে বুক ঘষাঘষি করে
কাঁপতে থাকে অন্ধকারে বাতি নিভিয়ে

গুচ্ছগুচ্ছ অন্ধকার হানা দেয় এখানে ওখানে
আয়তাল কুরসি ব্যতীত সমগ্র পৃথিবী শ্মশানঘাট
সোজা দাঁড়িয়ে যায় রক্তকণিকাগুলো
অস্তিত্ব ঢোকে পড়ে অনস্তিত্বের সিন্দুকে

আরশোলা নেঙটি ইঁদুর পায়চারী করে ভররাত
নৈঃশব্দ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক প্লাটুন নৈঃশব্দ
সুপার গ্লু-তে আটকানো স্থবির নির্বাক রাতের প্রতি
পদব্রজে আসবে কি ভোর— অপেক্ষা এবং প্রতীক্ষা

 

একজন ও

ভাঙ্গছে— স্পষ্ট শুনি— ভাঙ্গছে
গাছপালা নদীদীঘি হাড়গোড় রাস্তাঘাট
ভাঙ্গছে— ভূমিকম্প লম্ফঝম্ফ— ভাঙ্গছে
নীলাকাশ সবুজমাঠ শিশিবোতল— সব সবকিছু
অর্গানিক হৃৎপিণ্ড টিভি-গ্লাস
এবং বাড়িঘর— অবিরাম ভাঙ্গছে নিঃশব্দে

পাতা ঝরার মতো সূর্যাস্তের মতো
ঘুণে খাওয়া বৈদ্যুতিক কাঠের খুঁটি
পর্বতের বরফ শান্ত নদীর বাঁক
সাইবার তন্তুতে জোড়া লাগানো ঐক্ষিক সম্পর্ক
এবং মন— মাটির কলস নিষ্কলঙ্ক লোহার তৈজসপত্র
টুকরো টুকরো পারদের মতো
ছুটে যাচ্ছে এদিকওদিক

আমাদের নৈঃশব্দ্যের টুটিগুলো প্রতিদিন ভাঙ্গছে নিঃশব্দে
কেবল আমি জানি আর খোঁজ রাখে একজন ও

 

ছায়া এবং উপচ্ছায়া

ছায়ায় কেঁপে ওঠলে উপচ্ছায়া— ঘোষিত হয় চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ
বিবেচনা হলো বোধের ক্লেদজ জলাশয়— ক্যাটফিসের উল্লাস
অমাবস্যার ক্ষুব্ধ মিছিলে ম্রিয়মাণ কী ভীষণ ম্রিয়মাণ চাঁদ
আকাশের বিজন এপার্টমেন্টে ঘৃণামাখা পাললিক পলেস্তারা
মন থেকে তেড়ে যায় ঘৃণা— শব্দহীন সুপারসনিক মারণাস্ত্র
এমন উদাহরণ একটিও নেই নিশানা যার হয়েছে ব্যর্থ

ইঁদারায় পতিত হাবুডুবু খাওয়া কতিপয় অপচ্ছায়ার
আকাশ দর্শন নিয়ে শুরু হলে ঐতিহাসিক সংবাদ সম্মেলন
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পরবর্তী পৃষ্ঠায় শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব
ভগবানকে ভূতে রূপান্তরিতকরণের ব্যবস্থা হয় গৃহীত
কিন্তু টিপু সুলতানের ভঙ্গিমা ওঁত পেতে থাকে ঝোপের আড়ালে

নিরুপায় বৃক্ষ ফেরে না কখনো বীজে— বিজন ভ্রুণে
আকাশ শুধু নয় ফুটবল খেলার মাঠে কোনো নীল গোল বল
লম্ফঝম্ফ লাথালাথি শেষে চীৎকার করতালি— গোল গোল গোল
আজকাল ‘গরীবের বউ হগল বেডারই বাউজ’ হয় নাকি
তাতেই গৌরব— যা যতো শূন্য তা ততো তুমুল উচ্চকিত উচ্চণ্ড

বিশ্বকোষ লিখে রাখে রোদ ও অপচ্ছায়ার যাবতীয় কারুকাজ
প্রতিটি দৃশ্যের দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং বেধ বিট-বিট শূন্য-এক ছকে
মহাকালের মহাগহ্বরে প্রত্যেকটি ঘটনার মতো রটনাও
নির্দিষ্ট কোষে কোষে সঞ্চিত হয় নিদ্রিত চারুকলায়
কাম্য আলো জল হাওয়া উষ্ণটা পেলেই অঙ্কুরিত হবে নিশ্চিত
যে বোঝে সে বোঝে কিংবা যে বোঝে না সে বোঝে না

 

তুমি

তুমি উদ্বাস্তু হলে
আমি হবো ডাকবাক্স

শীত-গ্রীষ্মে শরৎ-বসন্তে
বৃষ্টি-রোদে স্নাত হয়ে
থাকবো অপেক্ষায়—
প্রতীক্ষার ইট গেঁথে

তুমি উদ্বাস্তু হলে
আমি হবো দুইবেডের
স্টুডিও এপার্টমেন্ট

 

দু’হাত উপরে তুলো বাছাধন

গ্যাসবেলুনের মতো আঙুলের ফাঁক দিয়ে
পিছলে চলে গেছে সময়
সুতা ঝুলছে কয়েক গজ—
কঞ্চি হাতে পিছুপিছু বাচ্চালোক

ঘোরের ভিতর অথবা স্বপ্নের মধ্যে
আদিগন্ত বীজতলা— চারার হিল্লোল
মখমলের পোশাক— রাজকীয় অনুভব
অর্গানিক জ্যুসের বোতল এবং বরফের কুচি

অরোহনের সেই বিকল্প পথে নেই অবরোহনের শঙ্কা
পাত্রহীন রেতঃপাতে যেমন থাকে হস্তের প্রতিকল্প ব্যবহার
প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে যেমন সংকটপূর্ণ পথ পদ্ধতি
বিসর্জনের জলাশয় থেকে ছিপ-বড়শিতে তুলে আনা অর্জন

মগচূড়ায় বসে বেলুন ধরে ধরে
সুপার গ্লু দিয়ে আটকে রাখে কে যেনো গাছে-গাছে
কখনো গ্যাস ফুরিয়ে গেলে শুরু হবে অবরোহন
সে আশায় গাছের নীচে বসে খেলা যাক তবে তাস

মোমবাতি নিভে যাওয়ার আগে
সেরে ফেলা ভালো সমস্ত জরুরি কাজকর্ম
হয়তো এমন সময় চড়েছে বিরতিহীন ট্রেনে
চট করে এসে বলে দেবেঃ দু’হাত উপরে তুলো বাছাধন

 

পদচারণা

মস্তিষ্কের মৌ-কোষে কিচ্ছুটি নেই অবশিষ্ট
ফুরিয়ে এসেছে পথ—
ফিরে যেতে হবে পতাকা নামিয়ে
পিছনে-সামনে বিশাল এক শূন্য
পেতে রেখেছে তাঁবু
চারপাশে দেয়াল লিখন—
একাকী এবং একাকী

পরিধির বাইরে এসে
পেটভর্তি ঘাস খেয়ে
কেন্দ্র ফিরে যায় বৃত্তের অভ্যন্তরে
আমাকে অবহেলায় কারাবন্দী করে
তুমুল হর্ষ লিপ্ত হয় ভোজের উৎসবে
সবকিছুই এ প্লাস বি হোল স্কোয়ারের ফর্মূলা

ছায়ার ভিতরে যে অপচ্ছায়া
অঙ্কুরিত হয় নৈঃশব্দ্যের বীজপত্রে
সে হিল্লোলে যা কিছু ছিলো
তা কিছু কেনো আর নেই
এখন কি অফিসের শেষ—
বাড়ি ফেরার পথে পদচারণা

SM20

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts