মেট্রো নিউজ : সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে সৌদি আরব থেকে নিয়ে এসেছে পুলিশ। অপরাধ সংগঠনের পর পালিয়ে যাওয়া এই বাংলাদেশিকে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বিচারের মুখোমুখি করতে ফেরত আনা হয়েছে।
সৌদি আরবে পুলিশের হেফাজতে থাকা কামরুলকে আনতে গত সোমবার ভোরে রিয়াদে যান পুলিশ সদরের তিন কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার বিকালে আসামিকে নিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তারা ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন। দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের ওই ফ্লাইটে বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত সুপার মাহবুবুল করিম বলেন, ১২ জুলাই কামরুলকে সৌদির জেদ্দায় আটক করা হয়। প্রথমে তিনি কনস্যুলেটে ছিলেন।“সর্বশেষ সৌদির রিয়াদ থানা থেকে পুলিশ তাকে বুঝে নিয়ে ঢাকায় এসেছে। এখন তাকে সিলেটে পাঠানো হবে।”
এআইজি (গণমাধ্যম) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের কোনো বন্দি বিনিময় চুক্তি ছিল না। তারপরও আমরা তাকে আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনেছি।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কামরুলকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুরোধ করলে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাতে সম্মত হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত সুপার মাহাবুবুল করিম, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার এএফএফ নেজাম উদ্দিন আসামি কারমরুলকে আনতে সৌদি আরব যান।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে খুঁটিতে বেঁধে ১৩ বছরের শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যার পর বিদেশে পালিয়ে যান কামরুল । তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটিতে থাকেন।
রাজনকে নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদেশে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তখন প্রবাসীদের সহায়তায় কামরুলকে আটক করে সৌদি পুলিশের হাতে তুলে দেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এরপর কামরুলকে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পুলিশ, জারি করা হয় রেড নোটিস।
ওই দিন শিশু রাজনকে পেটানোয় কামরুলই বেশি সক্রিয় ছিল বলে ওই ঘটনার ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়। রাজন হত্যাকাণ্ডের বিচার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সিলেটের আদালতে। বুধবার পর্যন্ত এই মামলায় ২৯ জনের জবানবন্দি শুনেছে আদালত।
ঘটনার দেড় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে গত ১৬ অগাস্ট ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার।
এরপর ২২ সেপ্টেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে আলোচিত এই হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
কামরুলকে নিয়ে এই মামলার আসামিদের মধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। পলাতকদের মধ্যে কামরুলের ভাই সদর উপজেলার শেখপাড়ার বাসিন্দা শামীম আহমদের সঙ্গে পাভেল আহমদ নামে আরেকজন রয়েছেন। কামরুলের আরেক ভাই মুহিত আলম এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
এআইজি নজরুল বলেন, “১৩ আসামির মধ্য ১১ জন গ্রেপ্তার হলেন। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।” পলাতক শামীম ও পাভেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে।