বিডি মেট্রোনিউজ || দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে অবিলম্বে ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতেও ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, “আমরা চাই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান। গণতন্ত্রের জন্য এক সঙ্গে কাজ করতে।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে গতবছর প্রথম তিন মাস টানা অবরোধ-হরতালে সাফল্য না পেলেও একবছরের মাথায় এ সমাবেশে আবারও নির্বাচনের দাবি তুলেছেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের উচিৎ ‘সবাইকে নিয়ে’ আলোচনা করে অবিলম্বে একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু’ নির্বাচন করার জন্য সুষ্ঠু ‘পরিবেশ সৃষ্টি করা’। “জোর করে বসে আছে, নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তাদের,” বলেন খালেদা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “সঠিক পথে আসুন, গণতন্ত্রের পথে আসুন। না হলে কিন্তু জনগণ কখন জেগে উঠবে বলা যায় না। জনগণকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে খালেদার দল বিএনপি ও তার শরিকরা। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ, আর দীর্ঘদিন পর বিএনপিকে সংসদের বাইরে থাকতে হয়।
ওই নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় এলেও কখনোই তা ফলপ্রসূ কোনো রূপ পায়নি।
অবরোধ-হরতালের কর্মসূচির পর নয়া পল্টনের এই সমাবেশই ছিল খালেদার বড় কোনো জনসভায় অংশগ্রহণ। সেখানে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কেবল ‘গণতন্ত্রই হত্যা’ করেনি, ‘মানুষ হত্যা’ করে দেশে ‘রাজতন্ত্র কায়েম করার’ চেষ্টায় আছে।
তিনি বলেন, “জনগণকে কখনো আটকানো যায় না। যে আইনে জনগণের কোনো কল্যাণ করে না সেটা মানুষ কোনোদিন গ্রহণ করে না।” ‘গুম-খুন করে’ কেউ কোনোদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি বলে সরকারকে সতর্ক করেন বিএনপিনেত্রী।
গত সপ্তাহে পৌর নির্বাচনে ভরাডুবির পর এটাই বিএনপির প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচি। নয়া পল্টনে খালেদা জিয়া ২০১২ সালে সর্বশেষ জনসভায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। ২০০৯-২০১৩ সালের মধ্যে কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে খালেদা বলেন, ‘একটু ফেয়ার ইলেকশন’ হলেই বিএনপি তাতে জয়লাভ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অধীনে ‘কোনোদিন’ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে ‘হবে না’।
খালেদা অভিযোগ করেন, বিরোধীদের ‘হয়রানি-নির্যাতনের’ জন্য সরকার পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করছে। “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাইয়েরা এখানে আছেন। তাদের প্রতি বলব, এরা তো এই বাংলাদেশেরই ছেলে। এতো অত্যাচার, এতো কষ্ট, গুম খুন করা .. এটা কি ঠিক? আপনাদের নিয়ে অন্যায় কাজ করাচ্ছে। আমি বলছি না পুলিশ বাহিনী খারাপ কিন্তু আপনাদের নষ্ট করছে।”
‘এসব’ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে খালেদা বলেন, “আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই। বাংলাদেশ ছোট্ট একটি দেশ। আমরা যদি সকলে মিলে-মিশে থেকে কাজ করি, বাংলাদেশকে আমরা একটি সুন্দর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।”
দীর্ঘদিন পর এই সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। দুপুরের আগে থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা জড়ো হতে থাকেন নয়া পল্টনে সভামঞ্চের সামনে।
এক পর্যায়ে নয়া পল্টন সড়কের পূর্বে ফকিরেরপুল মোড় এবং পশ্চিমে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেঁস্তোরা পর্যন্ত সড়কে সমাবেশের বিস্তার ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ যানচলাচল বন্ধ করে দেয়।
বেলা ২টার পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে সভার কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমে বক্তৃতা করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান।
খালেদা জিয়া বেলা পৌনে ৩টার দিকে জনসভা মঞ্চে এলে নেতা-কর্মীরা করতালি ও শ্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। খালেদাও হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, আসম হান্নান শাহ, জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, জ্যেষ্ঠ নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, হারুন আল রশীদ, মোহাম্মদ শাহজাহান ও রুহুল কবির রিজভীও সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।