শেখ নজরুল-এর অন্তর ছুঁয়ে যাওয়া ত্রয়ী

শুধু আনন্দ নয়, গান গাইতে ইচ্ছে করে

মানুষ নিজেকে সুন্দর করার চেষ্টা করছে

দেখতে ভালো লাগে

শুধু দেখতে নয়, ভাবতেও ভালো লাগে

মানুষ সুন্দর হবে-এর চেয়ে

ভালো আর কী হতে পারে?

 

মানুষ নিজেকে পড়তে-পড়তে স্নান করবে

সাবান মাখবে, সুগন্ধি ছড়াবে, শ্যাম্পু করবে

চুল আঁচড়াবে, পোশাক পরবে

নিপাট পোশাক থেকে স্ত্রীর গন্ধ ভাসবে

এর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে?

 

মানুষ নিজেকে সুন্দর দেখার চেষ্টা করছে

এটা পড়তে ভালো লাগে

শুধু পড়তে নয়, মুখস্থ করতেও ভালো লাগে

মানুষ পাখি পুষছে, কুকুরকে শ্যাম্পু করিয়ে

চুক চুক করে চুমু দিচ্ছে

তার পিঠে পা তুলে ঘুমুচ্ছে-দেখলে আনন্দ হয়

শুধু আনন্দ নয়, গান গাইতে ইচ্ছে করে

 

Vidy

 

মানুষ আয়নার সামনে দাঁড়াচ্ছে

দাগ-দাগান্তর পরখ করছে, হেসে দেখছে

চোখ খুলে, চোখ বন্ধ করে দেখছে

চোখ পিটপিট করে দেখছে

বুক খুলে দেখছে, বাঁকিয়ে পিছন দেখছে

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দেখছে, কপাল কুঁচকে দেখছে

নিজের নাভিতে নিজেই সুড়সুড়ি দিয়ে দেখছে

 

মানুষ নিজেকে উত্তেজিত রাখতে চেষ্টা করছে

ভাবতেও ভালো লাগে!

 

kobita

তোমার এমন বেয়াড়া ইচ্ছে, হয় কেনো রে মানুষ!

 

বৃষ্টি শেষের আকাশে অবাক রকম জোছনা

উঠোন ভরে মেঘের আড়ালে ঝকমকে রোদ্দুর

ঝরনায় ক’দিন গাভীন জলের গান ভরপুর

জেনেছে সবাই এই আমি অকারণ বিচ্ছেদে নেই

তবু এই মন, ভালো হচ্ছে না কিছুতেই

 

যে কথা বলার প্রয়োজন গেছে ফুরিয়ে

সে কথাই বলছি, মনকে জাগাতে একটু ঘুরিয়ে

যে গল্প শুনেছি যার কাছে, বলছি আবার তাকেই

যার কাছে যাবার কথা, মনে নেই তার নাম

মাধবীর মুখ ভুলে, মেধাবি চায় কিসের দাম!

 

কারো কোনো চাওয়া নেই, নেই দাবী-দাওয়া

বাড়ছে বেতন, কাজ নেই, খাচ্ছি কোমল হাওয়া

একা থেকে খুব দ্রুত ঘটছে, একাংশের বিস্তার

এককের আগে শূন্য বসিয়ে বাড়ছে বিরাট পরিবার

আত্মকাহিনী লিখবো? তারও তো কোনো তাড়া নেই

তবু এই মন ভালো হচ্ছে না কিছুতেই

 

ফল ও শস্যে এবার স্বদেশের মুখে হাসি বয়ে যায়

আয়ু বেড়েছে গড়ে, বেড়েছে ঠোঁটপিছু আয়-ব্যয়

কাজের ছেলেটা ভালোই বেগুন ভাজতে পারে

আলোয় তেলটা ঢেলে, বাকি সব ঘটে যায় আন্ধারে!

 

বুঝতে পারি না, দূর্বল স্মৃতি, মনেও থাকে না অংক

আমি কি একা থেকে একাংশ হবো, নাকি হবো অসংখ্য

ছড়িয়ে যাবো, ছড়িয়ে যাবো, ছড়িয়ে যাবো, ছড়িয়ে যাবো

এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা আমেরিকা এবং সে রুশ

ভাগ নেবো সব রক্তের, সব কান্নার, সব মৃত্যুর

এক দৌড়ে পার হয়ে যাবো-সামনে দেখি যতদূর

ছড়িয়ে যাবো, ছড়িয়ে যাবো, ছড়িয়ে যাবো, ছড়িয়ে যাবো

 

এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা আমেরিকা এবং সে রুশ

তোমার এমন বেয়াড়া হচ্ছে, হয় কেনো রে মানুষ!

 

kobita.l

ইচ্ছেগুলো রাতজাগা শালিকের মতো

 

আমরা ইচ্ছে করলেই ভালোবাসতে পারতাম, অথচ

ইচ্ছেগুলো রাতজাগা শালিকের মতো মরে যায়

আমরা তখন ট্রেন থেকে নেমে ভাবতে থাকি-

কার বাসায় গেলে অন্তত দুটোদিন থাকা যায়!

 

আমরা ইচ্ছে করলেই কাছে আসার দিনগুলো

অনেক কমিয়ে আনতে পারতাম

ইচ্ছেগুলো কুয়াশার মতো, নদীর যাত্রাপথ গ্রাস করে

আমরাও পারাপারের ভার ছেড়ে দিই-সারেংয়ের হাতে

হয় অনিবার্য সংঘর্ষ, না হয় পারাপারে নিষেধাজ্ঞা

তারপর অসময়ে কূলে ভিড়ে ভাবতে থাকি-

অনুপ্রবেশের চেয়ে প্রত্যাবর্তনই ভালো ছিলো!

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts