জলসীমায় পুরো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারছেনা বাংলাদেশ

মেট্রো নিউজ : মায়ানমার, ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তি হলেও ইতিপূর্বে ভারতের দখলে থাকা অংশের পুরো জলসীমায় বাংলাদেশ এখনও তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বিশেষকরে ভারতের সাথে সুন্দরবন সংলগ্ন কিছু এলাকায় এ সমস্যা রয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনও ম্যাপিং এর কাজ শেষ না করার ফলেই ভারতের কাছ থেকে পাওয়া নতুন জলসীমায় বাংলাদেশ তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনাকাঙ্খিত জটিলতায় পড়েছে।

মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে জানা গেছে, সুন্দরবন এলাকায় বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমায় ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরছে। ভারতীয় ট্রলার বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় উন্নতমানের শতাধিক ট্রলার গভীর সমুদ্রে সুন্দরবনের কাছাকাছি এলাকায় ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ধরছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোষ্টগার্ড কর্তৃক তাদেরকে আটক করেও

তেমন একটা ফল পায়নি। অনেক সময় অনুপ্রবেশকারী এইসব নৌযান তাড়া করা হয়। সাময়িকভাবে সরে গিয়ে তারা আবার বাংলাদেশের জলসীমায় এসে মাছ ধরে। নৌবাহিনী ও কোষ্ট গার্ডের সদস্যরা গত তিন সপ্তাহে বারটি ভারতীয় ট্রলার ধরেছে। জেলেসহ ট্রলার নিয়ে তারা সমস্যায় পড়ে। মংলা থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা মামলা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। পরে ট্রলারসহ জেলেদের ছেড়ে দিতে হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে তাদের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। ভারতীয় ট্রলারগুলো বাংলাদেশের সুন্দরবনের দূরবর্তী ও অদূরবর্তী যেসব এলাকায় মাছ ধরে সেসব এলাকা আগে ভারতের দখলে ছিল। সামুদ্রিক জলসীমা নির্ধারনের পর এসব এলাকা বাংলাদেশের অংশে পড়েছে। এ সংক্রান্ত ম্যাপিং বাংলাদেশ থেকে সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে বাংলাদেশের আইনগত পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাসহ বাংলাদেশ যে জলসীমা পেয়েছে তার ম্যাপিং এখনও করেনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ভারতীয় ট্রলারগুলো পূর্বেকার ম্যাপ দেখে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করে মাছ ধরে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছেন, তাদের কাছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নতুন কোন ম্যাপিং না থাকায় তারা বাংলাদেশের জলসীমা ভারতীয় মনে করেই এ অঞ্চলে আসে । মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে নতুন ম্যাপিংয়ের কাজ সম্পন্ন করে সমুদ্রের মধ্যে মাছ আহরনকারীদের সরবরাহ করতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করার জন্য বলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উন্নত সম্পর্ক বজায় থাকার প্রেক্ষিতে আটক ট্রলার মামলার জটিলতায় না ফেলে বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে। ভারতীয় ট্রলারগুলোর অবৈধভাবে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢোকা সংক্রান্ত মামলা হয়নি। নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড সুন্দরবন সংলগ্ন জলসীমায় টহল জোরদার করেছে। তারপরও ভারতীয় ট্রলার অবৈধ অনুপ্রবেশ করে প্রচুর ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশী জেলেরা ভারতীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের ট্রলারে মাছ তুলে দিচ্ছে। জেলেরা ভারতীয়দের কাছ থেকে দাদন নিয়ে থাকে বলে তারা এই অসাধু পন্থায় আশ্রয় নেয়। এরফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে যথেষ্ট পরিমানে ইলিশ উঠছেনা।

এ ছাড়া গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উপযোগী ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ট্রলার না থাকায় বাংলাদেশ মাছ ধরতে পারছেনা। ভারতীয়রা গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের জলসীমা থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের ট্রলারগুলোও একই কাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts