সব পুলিশ ‍এক নয়

বিডি মেট্রোনিউজ ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার দুটি চেক আর মূল্যবান কিছু কাগজপত্র রাস্তায় পেয়ে মালিককে ফিরিয়ে দিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কনস্টেবল লিটন সুতার।

যে পুলিশের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই অভিযোগ ওঠে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করার সেই পুলিশই দেখালো এক অনন্য সততা। সততার স্বাক্ষর রাখা সেই পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করলেন চেক আর কাগজপত্র হারানো সামিট গ্রুপের কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ রাসেল। শুধু প্রশংসাই নয় বরং পুলিশ নিয়ে পাল্টে গেল তার ধারণাও।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে শেরাটন মোড় দিয়ে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন সামিট গ্রুপের কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ রাসেল। হঠাতই তার কাছে থাকা একটি ল্যাপটপের ব্যাগ ছিটকে পড়ে রাস্তায়। ব্যাগ পড়ে যাওয়া সত্ত্বেও কিছুই বুঝতে পারেননি সাইফুল্লাহ। তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটে চলেন গন্তব্যে।

মোটরসাইকেলে ডিউটিতে যাওয়ার পথে ঘটনাটি কাছ থেকে দেখেন কনস্টেবল লিটন। এসময় ব্যাগটি তুলে নিয়ে ওই মোটরসাইকেলের পেছনে ছুটতে থাকেন তিনি। ব্যাগ হারানো ওই ব্যক্তির পেছন পেছন কাকরাইল মোড় পর্যন্ত যান কনস্টেবল লিটন। অনেক ডাকাডাকি করেও ওই ব্যাগের মালিক মোটরসাইকেল আরোহীর কোনো সারা মেলে না। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে হারিয়ে ফেলেন তিনি।
অবশেষে রাস্তায় পাওয়া ব্যাগটি নিয়ে সরাসরি মিন্টোরোডে ঢাকা মহানগর পুলিশ কার্যালয়ে চলে যান কনস্টেবল লিটন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পর ব্যাগটি খোলা হয়। এরপরই দেখা যায় ব্যাগে মোট ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার দুটির চেক ও সামিট গ্রুপের সাইফুলের কিছু জরুরি কাগজপত্র।
পরে ওই ব্যাগে থাকা ভিডিটিং কার্ডের নম্বরে সাইফুল্লাহকে ফোন করা হয়। তিনি ছুটে আসেন ডিএমপি কার্যালয়ে। বেলা ২টার দিকে কিছু প্রমাণপত্র দেখার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সাইফুল্লাহর কাছে তুলে দেওয়া হয় তার হারিয়ে যাওয়া ব্যাগ, টাকা আর জরুরি কাগজপত্র।
সাইফুল্লাহর হাতে এসব জিনিসপত্র তুলে দেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্সের এডিসি জাহাঙ্গীর আলম সরকার। তিনি বলেন, পুলিশের কাজ হলো জনগণের সেবা করা। কনস্টেবল লিটন যে সততা দেখিয়েছে তা এক দৃষ্টান্ত।
সাইফুল্লাহ বলেন, পুলিশের মধ্যে ভালো মন্দ সবই আছে। ওই পুলিশ সদস্য যে সততা দেখিয়েছেন তা সত্যিই অনুকরণীয়। অনেক পুলিশই ভালো কাজ করে থাকেন তা আজ বুঝলাম। আমার মনে পুলিশ নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল তা আজ দূর হয়ে গেল।
লিটন সুতার বলেন, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার যে ব্রত পুলিশ বিভাগ শিখিয়েছে আমি সেটা পালন করার চেষ্টা করেছি। ২০১২ সালে ডিএমপিতে কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন লিটন সুতার। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে।
সম্প্রতি রাজধানীতে পুলিশের হাতে হেনস্তার শিকার হন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপার হয়। অভিযুক্ত পুলিশের দুই সদস্যকে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সততার এক প্রমাণ দিলেন ডিএমপিরই আরেক সদস্য লিটন সুতার।
Print Friendly, PDF & Email

Related Posts