বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তাঁদের মারধর করা হয়। এতে চার-পাঁচজন আহত হয়েছেন। এক নেতাকে তুলে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনের জন্য দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এ হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনকে আহত অবস্থায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে থাকা ছাত্রলীগের নেতারা গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, তারা কোনো হামলা বা মারধর করেননি। ছাত্রলীগ দেশের আইন মেনে চলে। তারা আইন নিজের হাতে তুলে নেয় না।
শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে বাধা দিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। এতে ১০ জনের মতো আহত হন। আহতরা অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তবে হামলা ও মারধরের ব্যাপারে ছাত্রলীগের নেতাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর পরই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ অধিকার ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বাধা ও হামলার প্রতিবাদে রোববার থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে গতকাল রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের মানববন্ধনের কর্মসূচি চলাকালে হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস থাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি। আজ কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতির সময় ফের হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল ১০টার পর থেকে আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন। ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ৩০-৪০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সেখানে আসেন। এর মধ্যে ছিলেন মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান সানি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সাঈদ বাবু, বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলামিন রহমান, বিজয় ৭১ হলের সভাপতি ফকির আহমেদ রাসেল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদি হাসান রনি প্রমুখ।
এ সময় আন্দোলনকারীরা ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার আগেই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। তখন আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক রাশেদ আল মামুন সেখান থেকে সরে যান। যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনসহ দুজনকে সেখানে ফেলে মারধর করা হয়। এতে চার-পাঁচজন আহত হন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুন নাহার নীলা শহীদ মিনারে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘ফারুককে ছাত্রলীগ নেতা আলামিন রহমানের একটি মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আমরা জানি না।’
এ ঘটনার পর সেখানে থাকা ১৫-২০ জন আন্দোলনকারী শহীদ মিনারে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান। তখন সাঈদ বাবুর নেতৃত্বে ফের হামলা চালানো হয়ে বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের শহীদ মিনার থেকে চলে যেতে বলেন।
আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুন নাহার নীলা বলেন, ‘আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি। সেখানে হামলা করা হয়েছে। আমরা কি আমাদের কথা বলতে পারব না? প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন দিয়ে দিলে আমরা আর আন্দোলন করব না। আমরা প্রজ্ঞাপন চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ‘আজকের (সোমবার) হামলার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার প্রক্টরিয়াল বডি বা শিক্ষার্থীরা লিখিত বা মৌখিক কোনোভাবেই বিষয়টি আমাকে অবহিত করেননি।’
শহীদ মিনারে মেয়েদের লাঞ্ছিত এবং ছাত্রলীগের কাছ থেকে ধর্ষণের হুমকি পাওয়ার বিষয়ে আন্দোলনকারীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু হামলার বিষয়ে অবহিত নই এবং কেউ যেহেতু অভিযোগ করেনি, তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব।’
সোমবার (০২জুলাই) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মানববন্ধনে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ মাহবুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রক্টর বলেন, ‘এ বিষয়েও আমি কিছু জানি না। আমাকে কেউ এ বিষয়ে জানায়নি। জানালে ব্যবস্থা নেবেন।’
ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে শনিবার ও আজ (সোমবার) ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে বলে দাবি করেছে। ঢাবি ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলার দায়িত্ব ছাত্রলীগের নাকি প্রক্টরিয়াল বডির-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রক্টরিয়াল বডির। অন্য কাউকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল (রোববার) অভিযোগ পেয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডি কাজ করছে। আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
শনিবার ও সোমবারের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েছে কি না-জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য অনুযায়ী আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। শনিবারের হামলায় যেসব আহত শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি আছে তাদের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছ। এছাড়া নূরের চিকিৎসার খোঁজ খবর নিচ্ছি আমরা।’
তিনি আরো বলেন, ‘শনিবারের হামলার নিয়ে আমরা কাজ করছি। কারা হামলা করেছে তাদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করবো আমরা। এছাড়া শৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’