ওয়ালটন ঈদ মেগা ডিজিটাল ক্যাম্পেইন
নিজস্ব প্রতিবেদক : আরাধন চন্দ্র সাহা। পুলিশ সদস্য। দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় সংসদ ভবন নিরাপত্তা ইউনিটে। ওয়ালটনের একটি ফ্রিজ কিনে পেয়েছেন নতুন গাড়ি। দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন ঘোষণা করেছে ‘ঈদ মেগা ডিজিটাল ক্যাম্পেইন’। ক্যাম্পেইন শুরুর চতুর্থ দিনেই গাড়ি পাওয়ায় বিজয়ীকে নিয়ে শুরু হয়েছে হইচই। নতুন গাড়ি পেয়ে আরাধন আনন্দে উচ্ছ্বসিত। তার পরিবারে এখন আনন্দের বন্যা।
ওয়ালটন সূত্রে জানা গেছে ‘ঈদের খুশি জমবে ভারি, নতুন গাড়ির ছড়াছড়ি’ স্লোগান নিয়ে ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ‘ঈদ মেগা ডিজিটাল ক্যাম্পেইন’। এর আওতায় ওয়ালটন টিভি, ফ্রিজ কিংবা এসি কিনে রেজিস্ট্রেশন করে ক্রেতারা পেতে পারেন নতুন গাড়ি। রয়েছে ফ্রিজ, টিভি, এসিও। এসব ছাড়াও আছে নিশ্চিত ক্যাশব্যাকের সুযোগ। এই সুবিধা থাকছে ঈদুল আযহা বা কোরবানি ঈদ পর্যন্ত। বিক্রয়োত্তর সেবাকে ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় আনতে ওয়ালটনের এই উদ্যোগ।
আরাধন চন্দ্র সাহা জানান, তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ধূলাদিয়া গ্রামে। বাড়িতে বাবা-মা এবং একমাত্র ছোটবোন থাকেন। বাবা মানিক চন্দ্র সাহা পানের ব্যবসা করেন। মা গৃহিনী। ছোটবোন এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের হাজী শামস উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে এসএসএসি এবং ২০০৯ সালে আনোয়ারা মডেল ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন আরাধন। ওই সময় বাবার ব্যবসা ভালো যাচ্ছিল না। বাড়ির একমাত্র ছেলে তিনি। তাই সংসারের দায়িত্ব নিতে এইচএসসি পাশের পরই চাকরি নেন পুলিশে।
চাকরির পাশাপাশি পড়াশুনাও চালিয়ে যান আরাধন। সরকারী তিতুমীর কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। এরপর সরকারী বাংলা কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন। বেশ কয়েক জায়গায় কর্মক্ষেত্র বদলের পর তার দায়িত্ব পরে জাতীয় সংসদ ভবন নিরাপত্তা ইউনিটে।
এরমধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে বিয়ে করেন আরাধন। স্ত্রী রত্না রাণী সাহা নেত্রকোণা সরকারি কলেজ থেকে অনার্স ফাইনাল দিয়েছেন। স্ত্রী চলে আসবেন ঢাকায়। বিয়ের সাত মাস পর দুজনে শুরু করবেন নতুন সংসার। মিরপুরে ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া করেছেন আরাধন। স্ত্রী আসার আগেই এক এক করে প্রয়োজনীয় ফার্নিচার ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য কিনে সংসার সাজাতে শুরু করেছেন। প্রথমেই যে পণ্যটি কেনার পরিকল্পনা করেন সেটি ফ্রিজ।
দেখে-শুনে নিজের কষ্টের উপার্জনে সেরা ফ্রিজটি কিনতে মিরপুর এলাকার বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের শোরুমে যান আরাধন। সঙ্গে ছিলেন তার সহকর্মী ও বন্ধু অজিত সূত্রধর। তবে এসব শোরুমের ফ্রিজের ডিজাইন, মান এবং দাম কোনোটিই মনমতো হয় না তার। এ সময় বন্ধু অজিত সূত্রধর বলেন ওয়ালটনের কথা। তিনি জানান, ওয়ালটনের রয়েছে আকর্ষণীয় ডিজাইন ও কালারের অসংখ্য ফ্রিজ। অজিত কিছুদিন আগে একটি ওয়ালটন ফ্রিজ কিনেছেন। দারুণ সার্ভিস পাচ্ছেন। বন্ধু অজিতের মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ঘরের অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যই ওয়ালটনের। আরো কয়েকজন পরিচিত বন্ধুর কাছে খোঁজ নেন আরাধন। সবার পরামর্শ ফ্রিজ কিনলে ওয়ালটন থেকে কেনা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ হিসেবে তারা বলেন ওয়ালটনের ফ্রিজ দামে সাশ্রয়ী কিন্তু গুণে-মানে ভালো। সবার কথা শুনে ওয়ালটনের ফ্রিজ কিনবেন বলে ঠিক করেন।
বুধবার (৪ জুলাই) বন্ধু অজিতের সঙ্গে মিরপুর ন্যাশনাল বাংলা হাই স্কুল মার্কেটে ওয়ালটনের ডিস্ট্রিবিউটর মেসার্স ইন্টারএকটিভ ইলেকট্রনিক্স-এ যান তিনি। স্কুল গেটের পাশের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠেই তিনি মুগ্ধ। বিশাল শোরুমে অসংখ্য কালার ও ডিজাইনের ফ্রিজ। নিজের সামর্থ ও প্রয়োজন অনুযায়ী ৮ সিএফটি আয়তনের একটি ফ্রিজ পছন্দ করেন তিনি। যার দাম মাত্র ১৮ হাজার ২০০ টাকা।
ওয়ালটন পণ্য কিনলে নতুন গাড়ি, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো পণ্য ফ্রি পাওয়ার সুযোগ আছে, এটা জানা ছিল না আরাধনের। ফ্রিজ কেনার পর ক্যাশমেমো করার সময় শোরুমের ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান রিপন তাকে বিষয়টি জানান। তিনি আরাধনকে বলেন, ভাগ্য ভালো হলে নতুন গাড়িও পেতে পারেন। কিন্তু বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেন না আরাধন। তিনি তখন নিজের ছোট্ট সংসার সাজানোর সুখস্বপ্নে বিভোর।
এই ফাঁকে কখন তার মোবাইলে ওয়ালটন থেকে এসএমএস এসেছে, তা টেরই পান নি। একই মেসেজ যায় শোরুমের ম্যানেজারের কাছেও। তিনি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরাধনের মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখতে চান। তারপর আরাধনের দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনি অত্যন্ত ভাগ্যবান। নতুন গাড়ি পেয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন।
ম্যানেজারের কথা শুনে বিষয়টি যেন বিশ্বাসই হতে চায় না আরাধনের। মাত্র ১৮ হাজার টাকায় ফ্রিজ কিনে তিনি কি সত্যিই নতুন গাড়ি পেয়েছেন! পরে নিজেও ওয়ালটন থেকে আসা মেসেজটা দেখেন। এবার বিশ্বাস জন্মে তার। নিজের ভাগ্যে নিজেই হতবাক!। বিষয়টি তখনই ফোন করে জানান বাবা-মা এবং স্ত্রীকে। তারাও ভীষণ খুশি। এরমধ্যে সঙ্গে থাকা বন্ধু অন্যান্য বন্ধু ও সহকর্মীদের জানিয়ে দেন ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে নতুন গাড়ি পাওয়ার কথা। একের পর এক অভিনন্দন জানিয়ে ফোন আসতে থাকে আরাধনের মোবাইলে।
ফ্রিজ কেনার পরদিন বৃহস্পতিবার আরাধন চন্দ্র সাহার কাছে নতুন গাড়ি হস্তান্তর করা হয়। তার হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেন ওয়ালটন বিপণন বিভাগের প্রধান এমদাদুল হক সরকার। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ মো. নজরুল ইসলাম, ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. হুমায়ূন কবিরসহ অন্যরা।
গাড়ি হস্তান্তরের সময় বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আরাধন। দেশপ্রেমিক আরাধন বলেন, ওয়ালটন দেশীয় ব্র্যান্ড। এ কারণেই ওয়ালটন শোরুমে এসেছিলাম ফ্রিজ কিনতে। কিন্তু ফ্রিজ কিনে এতবড় উপহার পাবো, তা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি খুব খুশি। সবচেয়ে খুশি আমার স্ত্রী। কারণ আমাদের ছোট্ট সংসারের জন্য প্রথম ইলেকট্রনিক্স পণ্য কিনেই পেলাম নতুন গাড়ি। এরচেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে!
ওয়ালটনের এক্সকুসিভ ডিলার শোরুম মেসার্স ইন্টারএকটিভ ইলেকট্রনিক্স-এর ম্যানেজার আসাদুজ্জামান রিপন জানান, এর আগেও ওই শোরুম থেকে একজন ক্রেতা এসি কিনে ফ্রিজ পেয়েছিলেন। ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের নতুন অফারের প্রথম গাড়িটি তার শোরুমের একজন ক্রেতা পাওয়ায় তিনিও আনন্দিত। গাড়ি হস্তান্তরের পর ভাগ্যবান ক্রেতাকে নিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে ব্যান্ড পার্টিসহযোগে মিরপুর ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। কিন্তু আরাধনের মনে শুধু আনন্দ নয়, বসে গেছে চাঁদের হাট।
#