এক. ভালোবাসি ভালোবাসি
বলো পাখি বলো, পাখির মতো ডানা মেলে অনন্ত সুখের জলোচ্ছ্বাসে বলো, প্রবাহমান জলের মতো যেতে যেতে বলো, হাসির ফোয়ারায়, চুড়ির রিনিঝিনি শব্দের কাঁপন সুরে বলো- ভালোবাসি মাটির কসম ভালোবাসি।
বলো পাখি বলো, ধাবমান হরিণির মতো সলজ্জ ভাষায় মেঘের সঘন আবেগে বলো, পিপিলিকাদের মতো ক্ষ ুধার্ত অনুরাগে বলো- ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি, তাজমহলের কসম ভালোবাসি।
ভালোবাসার মতো সত্য আর কিছু নেই। চৈত্রের খরায় যখন সবুজ মাঠ জ্বলে পোড়ে ছাই হয়ে যায়, তখন দুগ্ধ গাভীর উলান ক্ষীণ হয়ে আসে। এই বুক মমতাহীন দীর্ঘ খরায় পুড়ে গেছে। পাখি পাখি করে করে তার চোখের দৃষ্টিতে আজ ছানি পড়ে গেছে। চারিদিকে ভালোবাসার বড্ড অভাব। এই পোড়া বুকে তুমি যেন শীতল ছায়ার মতো অষুধি বৃক্ষ। তোমার উপমা শুধুই তুমি।
বলো পাখি বলো, বুকের ভেতর জেগে ওঠা দূতাবাসের ছন্দে, জীবনের অপার আনন্দে, বকুলের সুরভিত গন্ধে, বকুলের কসম খেয়ে বলো ভালোবাসি, তোমাকে সত্যি ভালোবাসি।
ভালোবাসা যে কখনো কখনো প্রয়োজনের চেয়েও বেশি প্রয়োজন- পাখি তোমাকে জানিয়ে রাখি।
দুই. ভালোবাসার ছাতা
পাতা ও পাখিদের উৎসবে ফিরে আসি আমি বারবার,
এই বনাঞ্চলে হাট বসে পাতা ও পাখিদের ভালোবাসার।
তাদের নিবিড় সখ্যতায় জেগে ওঠে হৃদয়ের অনাবিল সবুজ গ্রাম,
পাতা ও পাখি, পাখি ও পাতা বনভূমে স্বাধীন সার্বভৌম অবিরাম।
বনের পাখিরা পাতার ছায়ায় খেলা করে চৈত্র দিনের খরায়,
আর ঝড়ের দিনে তারা পাতার বাসায় নিরাপদে ঘুম যায়।
পাতা ও পাখি, পাখি ও পাতা
হয়ে গেছে ভালোবাসার ছাতা।
তিন. বুক পকেটে নিভৃত গৃহপাঠ
তোমার দিকে যেতে যেতে কখনো কখনো ভালোবাসা বুকে নিয়ে পাড়ি দিই থই থই নদীর জল।
কখনো বা মেঘলা আকাশ থেকে কুড়িয়ে আনি বিষন্ন বৃষ্টির দুপুর।
এই মনপোড়া শূন্যঘরের হাহাকার হাওয়ায় ঘুরে বেড়ায় তোমার জামদানি শাড়ির আঁচল।
এই মনপোড়া চোখের দূর আঙ্গিনায় ভেসে বেড়ায় তোমার গন্তব্যের জংশন।
আমি আজও বুক পকেটের নিভৃত গৃহপাঠে তোমার দিকেই ধাবিত, অবিরাম।
————————————————
শিউল মনজুর। জন্ম ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫।
কবিতার বই ৮টি। ছড়ার বই ২টি। উপন্যাস ১টি। গল্প বই ২টি। শিক্ষা বিকম (অনার্স), এম কম। পেশা অধ্যাপনা। প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় লেখালেখি করছেন। মূলত কবিতাই তার প্রাণ। কবি হিসেবেই বাংলাভাষাবাসির নিকট তাঁর পরিচিতি । বিশেষ করে সুরমা গাঙের বাসন্তি নাও, শাদা পাতা শাদা চোখ ও পাতা শিশিরের অভিধান– এর কবিতাগুলোর মধ্যদিয়ে তিনি সমসাময়িক কবিদের মধ্যে একজন স্বতন্ত্র ধারার কবি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রকাশিত সর্বশেষ কাব্য সবুজ পাতার জংশনে এর কবিতাগুলোও দুর্দান্ত।