শাহ মতিন টিপু : মহররম আরবি বা হিজরি সনের প্রথম মাস। হিজরি হচ্ছে চাঁদ নির্ভর সাল। চাঁদ দেখার হিসাব অনুযায়ী ১৪ অক্টোবর থেকে ১৪৩৭ হিজরি শুরু হয়েছে। আর প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ অর্থাৎ পবিত্র আশুরা আজ ২৪ অক্টোবর।
নানা কারণেই পবিত্র আশুরার গুরুত্ব অপরিসীম। এ আশুরাকে ঘিরে আমাদের সৃষ্টি থেকে শুরু করে অনেক প্রাণস্পর্শী ঘটনা সংঘটিত হতে দেখা যায়। এসব ঘটনাই বুঝিয়ে দেয় মানবজীবনের অনন্য বলিষ্ঠতায় আশুরার গুরুত্ব কতখানি।
কারবালার শোকাবহ ঘটনাবহুল এদিন মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এ দিনটি মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রায় এক হাজার ৩৩৩ বছর আগে এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন।
এ ছাড়া বিশ্বজগত সৃষ্টির সূচনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগে বহু গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদার ঘটনা ঘটেছে আশুরাতে। জানা যায়, মহান রাব্বুল আলামিন বিশ্বজগৎ সৃষ্টির সূচনা করেন আশুরাতে। আদি পিতা আদমকে (আ.) আল্লাহ সৃষ্টি করেন আশুরাতে। তিনি এবং তার স্ত্রী হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে অবতরণ করেন আশুরাতে। আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন আশুরাতে।
আবার, পৃথিবীতে প্রথম বৃষ্টি বর্ষিত হয় আশুরাতে, নূহ (আ.) মহাপ্লাবনের সময় ৪০ দিন কিশতিতে ভাসার পর পাহাড়ে অবতরণ করেন আশুরাতে, ইবরাহীম (আ.) নমরুদের অগ্নিকু- থেকে উদ্ধার হন আশুরাতে, ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে ৪০ দিন পর উদ্ধার হন আশুরাতে। ইউসুফ (আ.) ৪০ বছর পর পিতা ইয়াকুব (আ.)-এর সঙ্গে মিলিত হন আশুরাতে, সুলায়মান (আ.) হারানো রাজত্ব ফিরে পান আশুরাতে।
আবার আইয়ূব (আ.) ১৮ বছর পর রোগ থেকে মুক্তি পান, মূসা (আ.) মিসরের জালিম রাজা ফেরাউনের কারাগার থেকে হাজার হাজার বনী ইসলাঈলকে মুক্ত করে লোহিত সাগরের ওপারে নিয়ে যান এবং ফেরাউন সেনাবাহিনী ডুবে মারা যায়, তাও এই আশুরাতে। এমনি আরো অসংখ্য ঘটনার নীরব সাক্ষী আশুরা। জানা যায়, কিয়ামতও সংঘটিত হবে ভবিষ্যতের কোনো এক আশুরা দিবসের শুক্রবার।
আশুরা সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ৬১ হিজরির আশুরাতে কারবালা প্রান্তরে ইমাম হুসাইনকে (রা:) সপরিবারে শাহাদাত লাভের ঘটনার জন্য। ৬১ হিজরীর ১০ মহররম শুক্রবার আশুরার দিনে রাসূলুল্লাহর (সা.) নাতি হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) হক ও ইনসাফ চলমান রাখার লক্ষ্যে কারবালা প্রান্তওে ত্যাগের অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। যুগ যুগ ধরে যা মানুষকে ন্যায় ও সত্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।