মেট্রো নিউজ :বিপিএলে লজ্জাকর বৈষম্য। ম্যাচ পাতানো আর নানা অনিয়মের রাহু-গ্রাস পেরিয়ে বিপিএল এখন মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায়। মাঝে এক বছর বিরতি দিয়ে আবারো শুরু হবে চার-ছক্কার ধুন্ধুমার এই লড়াই। শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসা মাসে বিষয়টা শিহরণ জাগানিয়া বটে। কিন্তু সব শিহরণ এক লহমায় ফুরিয়ে যাবে যখন আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে, এই আসরে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বিদেশি প্রায় অচল খেলোয়াড়দের চেয়ে কম টাকা পাচ্ছেন!
যে সাকিব আল হাসানকে দলে নিতে বিদেশি লিগগুলোতে রীতিমতো লড়াই বেঁধে যায়, আর সেই সাকিব আল হাসান কিনা বিদেশি ‘বি’ ক্যাটাগোরির খেলোয়াড়দের চেয়ে কম টাকা পাবেন! কলকাতা নাইট রাইডার্স এক মৌসুমে সাকিবকে কিনে নেয় প্রায় চার কোটি টাকায়। আর সেই সাকিব কিনা বিপিএলে পাবেন মাত্র ৩৫ লাখ টাকা! সেখানে ‘বি’ ক্যাটাগরির বিদেশি প্রায় অচল খেলোয়াড় সাঈদ আজমল ও ব্রাড হগরা পাচ্ছেন প্রায় ৩৯ লাখ টাকা!
শুধু সাকিব কেন? দেশি সব খেলোয়াড়রাই বিদেশি খেলোয়াড়দের চেয়ে কম টাকা পাবেন। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে বিপিএল। দেশকে তুলে ধরা, দেশের ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিপিএল। কিন্তু সেখানে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান যদি বিদেশি ‘এ’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়ের অর্ধেক টাকা পান তাহলে এই বিপিএল আমাদের কাম্য হতে পারে না। বৈষম্য থাকবে। কিন্তু তাই বলে সেটা এতো আকাশ-পাতাল বৈষম্য হবে কেন?
একজন বিদেশি ‘এ’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড় পাবেন ৭০ হাজার ডলার (প্রায় ৫৫ লাখ টাকা)। আর বাংলাদেশি একজন আইকন খেলোয়াড় পাবেন মাত্র ৩৫ লাখ টাকা? এ বিষয় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের দাবি সাকিব-তামিমদের সঙ্গে কথা বলেই বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে। হোক না কথা বলেই নির্ধারণ করা। তাই বলে অর্থের পরিমাণটা অর্ধেক হবে কেন? বিদেশি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ ছাড়া বিপিএল তার মর্যাদা কিংবা আকর্ষণ হারাবে! আফ্রিদি, গেইল, শোয়েব মালিক, কুমার সাঙ্গাকারাদের ছাড়া দর্শকপ্রিয়তা হারাবে বিপিএল! তাই বলে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের ঠকিয়ে বিপিএল কেন? এতো বৈষম্য করে কেন?
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছে কে কত পাবে। সে অনুসারে চারটি ক্যাটাগরিতে বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ঠিক করা হয়। ‘এ’ ক্যাটাগরির বিদেশি খেলোয়াড়রা পাবেন ৭০ হাজার ডলার (৫৫ লাখ+ টাকা), ‘বি’ ক্যাটাগরি ৫০ হাজার ডলার (প্রায় ৩৯ লাখ টাকা), ‘সি’ ক্যাটাগরি ৪০ হাজার ডলার (প্রায় ৩২ লাখ টাকা) ও ‘ডি’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা পাবেন ৩০ হাজার ডলার (২৩ লাখ টাকা)।
অন্যদিকে, দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ছয়জন আইকন খেলোয়াড় ৩৫ লাখ টাকা করে পাবেন। এছাড়া ‘এ’ থেকে ‘ডি’ ক্যাটাগরি পর্যন্ত খেলোয়াড়রা পাবেন যথাক্রমে ২৫, ১৮, ১২ ও ৬ লাখ টাকা।
যেখানে আমাদের আইকন খেলোয়াড়রা পাবেন ৩৫ লাখ সেখানে বিদেশি ‘এ’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা পাবেন ৫৫ লাখ প্লাস টাকা। দেশি ‘এ’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা বিদেশি ‘এ’ ক্যাটাগোরির খেলোয়াড়দের প্রাপ্ত অর্থমূল্যের অর্ধেকেরও কম পাচ্ছেন। আর যেখানে বিদেশি ‘ডি’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা পাবেন ২৩ লাখ টাকা সেখানে বাংলাদেশি ‘ডি’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা পাবেন মাত্র ৬ লাখ! ব্যবধানটা আকাশ-পাতাল।
আমাদের আইকন সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নাসির হোসেনকে কেন বিদেশি ‘বি’ ক্যাটাগরির চেয়ে কম মূল্য দেওয়া হবে। এটা তাদের কেবল কম মূল্য দেওয়া নয়, এটা সাকিব-মাশরাফিদের অবমূল্যায়ন। আমাদের ক্রিকেটের অবমূল্যায়ন। আর এটা শুধু এই আসরে নয়, আগের আসরেও হয়েছিল। ২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসরে আমাদের সাকিব আল হাসানের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিনো বেস্ট! আর এবার ব্রাড হগ, সাঈদ আজমল ও ওয়াহাব রিয়াজরাও সাকিবের চেয়ে বেশি পাচ্ছেন!
দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। তাই বলে সেটা এতো বেশি কেন? বিদেশি খেলোয়াড়রা ৫৫ লাখ পেলে আমার দেশের আইকন খেলোয়াড়রা তো ৫০ লাখ টাকা প্রাপ্তির দাবি রাখে। বিদেশি ‘ডি’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা ২৩ লাখ টাকা পেলে ‘ডি’ ক্যাটাগরির দেশি খেলোয়াড়রা ২০ লাখ টাকা প্রাপ্তির তো দাবি রাখে? যেখানে আমাদের ‘ডি’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা প্রথম শ্রেণির ঘরোয়া লিগে খেলেই পান প্রায় ২০ লাখ টাকা। সেখানে বিপিএলে কেন ৬ লাখ টাকা পাবে?
তা ছাড়া প্লেয়ারস ড্রাফটের বাইরে থেকেও ফ্র্যাঞ্চাইজিরা খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে। তাদের মধ্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস দলে ভিড়িয়েছে শোয়েব মালিক, মারলন স্যামুয়েলস, সুনীল নারাইন ও আহমেদ শেহজাদকে। সিলেট সুপার স্টারস দলে ভিড়িয়েছে শহীদ আফ্রিদিকে। চিটাগং ভাইকিংস- মোহাম্মদ আমির, কামরান আকমল ও উমর আকমলকে। ঢাকা ডাইনামাইটস- কুমার সাঙ্গাকারা ও নাসির জামশেদকে। বরিশাল বুলস- ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন টেলরকে এবং রংপুর রাইডার্স ড্যারেন স্যামিকে। এদেরকে যেহেতু ড্রাফটের বাইরে ব্যক্তিগতভাবে দলে ভিড়িয়েছে সেহেতু এদের অধিকাংশের পারিশ্রমিকের অঙ্কটা কোটি টাকা ছাড়াবে। তাদের কারো কারো পারিশ্রমিকের পরিমাণ দেড়কোটি বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে!
আফ্রিদি, গেইলরা যাই হোন না কেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নাসির হোসেনের চেয়ে তারা বেশি পাবেন কেন? এমন বিপিএল আমরা চাই না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে তো আমরা অন্ধভাবে অনুসরণ করি। আইপিএলের আদলেই তো হচ্ছে বিপিএল। তাহলে তাদের আইপিএলে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের যে মূল্য দেওয়া হয় সেটা অনুসরণ করছি না কেন? সেখানে তো বিদেশি খেলোয়াড়রা কোনোভাবেই দেশি খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পান না। তাহলে বিপিএলে কেন এই বৈষম্য!
বিপিএলের পারিশ্রমিক বৈষম্যের ছক:
দেশি ক্যাটাগোরি পারিশ্রমিক বিদেশি ক্যাটাগোরি পারিশ্রমিক
আইকন (৬) ৩৫ লাখ টাকা ‘এ’ ৫৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮০১ টাকা
‘এ’ ২৫ লাখ টাকা ‘বি’ ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫৭২ টাকা
‘বি’ ১৮ লাখ টাকা ‘সি’ ৩১ লাখ ১৬ হাজার ৫৫৮ টাকা
‘সি’ ১২ লাখ টাকা ‘ডি’ ২৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৩ টাকা
‘ডি’ ৬ লাখ টাকা – –