গতি বাড়াতে মন্ত্রিসভায় পুনর্বিন্যাস

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ মন্ত্রিসভায় পুনর্বিন্যাস করা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের কাজ থেমে থাকেনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ এগিয়ে গেছে। কাজের গতি আরও বাড়াতে মন্ত্রিসভায় পুনর্বিন্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।

সোমবার রাজধানীর বনানী সেতু ভবনে সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

নিজের সুস্থতা সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, দল, মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ অন্তরের যে আবেগ-ভালোবাসা থেকে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছে সেটা আমার জীবনের এক স্মরণীয় অধ্যায়। এটা চিরদিন আমার মনে থাকবে। এটা আমার দ্বিতীয় জন্ম। এটা আমার পুনর্জন্ম। এখন আমি নতুন করে আমার উদ্যম ও আশা আরও জোরদার করতে অনুপ্রাণিত হচ্ছি। আন্তরিকভাবে কাজ করলে, শ্রদ্ধাভরে চললে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, আমি হয়ত চেষ্টা করেছি ওইসব কাজ করতে এবং ওভাবে জীবনকে পরিচালনা করতে, যাতে মানুষের আস্থাটা পাওয়া যায়। কাজের যে স্বীকৃতি আমি বেঁচে না থাকলে দেখতাম না। তখন আমি অনেক কিছুই জানি না। পরবর্তীতে আমি সবই শুনেছি। আমার মতো সামান্য একজন রাজনীতিক জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জনগণের এতো ভালোবাসা, এতো দোয়া আল্লাহর দরবারে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা- এটা অচিন্তনীয়, অবিশাস্ব।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আমি এ মুহূর্তে অসুস্থতাজনিত কারণে কিছুটা দুর্বলতার মধ্যে আছি। আশা করছি, দ্রুত আমি কাজের গতি ফিরে পাব। আমি মাত্র শুরু করেছি। এখন আমার কাজের উৎসাহটা আরও বেড়ে গেছে। এখন আমার কমিটমেন্ট আরও গভীর হয়ে গেছে এবং মানুষের কল্যাণে ও মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আমার দ্বায়িত্ব পালনের তাগিদ নতুনভাবে পেলাম। মানুষের জন্য কাজ করলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়। সেটা যখন আমি নিজেই জীবিত অবস্থায় দেখলাম, এটা আমাকে নতুন করে উৎসাহিত করবে, অনুপ্রাণিত করবে। আমি যে কথাটা বলি, একজন রাজনীতিকের জীবনে মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় সম্পদ কিছুই নেই।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের দেশের সাংবাদিকরা, জনগণের আবেগ-ভালোবাসার যে অনুভূতিটা, সেটা তারা প্রচার করেছেন এবং তারা লক্ষ রেখেছেন। এই সময়ে প্রায় প্রতিদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত, আমাদের সাংবাদিকরা মিডিয়া কাভার করেছে, সে জন্য মিডিয়ার কাছেও আমার অনেক কৃতজ্ঞতা।

চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস : যুক্ত হবেন আরো ১১

টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর গঠিত মন্ত্রিসভা চার মাসের মাথায় কিছুটা রদবদল করা হয়েছে। চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পূনর্বিন্যাস করা হয়েছে। আগামীতে আরো কিছু মন্ত্রণালয়ে রদবদল করা হবে। এছাড়া কমপক্ষে ১১জন মন্ত্রিসভায় যুক্ত হবেন। এতে পুরনো মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্য থেকে দুই বা তিন বাদে বাদ বাকি সবাই নতুন মুখ হবেন বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রিসভার রদবদলের তথ্য জানানো হয়। এতে অন্তত তিন জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বভার কমেছে। মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রীকে নিয়ে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা সাজান তিনি।

এতে টেকনোক্র্যাট কোটায় ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া মোস্তফা জব্বারকে কেবল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে রাখা হয়েছে। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জুনাইদ আহমেদ পলক একই দায়িত্বে রয়েছেন। অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা তাজুল ইসলাম এখন কেবল স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যও এখন কেবল পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে রদবদল হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে সচিবালয়ে। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হতে পারে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীমকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হতে পারে। আর বর্তমান পানি প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুককে বিমান মন্ত্রণালয়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে অন্য মন্ত্রণালয়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া মন্ত্রিসভায় নতুন করে যুক্ত হতে পারেন কমপক্ষে আরো ১১ মুখ। এদের মধ্যে পুরনো মন্ত্রিসভার দুই তিন জন থাকতে পারেন। আর বাদ বাকি সবাই নতুন মুখ হবেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এমপি ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এবং দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জি. আব্দুর সবুরের স্থান পাবার বিষয়ে গুঞ্জন রয়েছে।

এছাড়া দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নাম আলোচনায় আসছে। টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় আসতে পারেন, এমন নেতাদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন দলের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।#

Print Friendly

Related Posts