মেট্রো নিউজ : রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসনী দালানে বোমা হামলায় নিহত স্কুল ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন সাঞ্জুর (১৬) পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ৫ ভাই ২ বোনে মধ্যে সবার ছোট ছিলো সাজ্জাদ। আদর করে সবাই সাঞ্জু বলে ডাকতো।
চড়াইল নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদকে নিয়ে বাবা-মার আশা আকাঙ্খার শেষ ছিলো না। ছেলে বড় হয়ে বাবা-মার দুঃখ ঘুচাবে। বড় চাকরি করবে। ভাই বোনদের দেখবে। এ রকম অসংখ্য স্বপ্ন দেখতেন বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন নাসির মিয়া। কিন্তু বোমা হামলায় সন্তানের মৃত্যুতে মনের সঙ্গে ভেঙেছে তাদের স্বপ্নও।
বোমা হামলায় আহত হয়েছেন নিহত সাজ্জাদের ভাবী (বড় ভাইয়ের স্ত্রী) সুমী (২৮), ভাতিজি সাজিয়া সুলতানা (১১) ও তার ভাবীর মা আয়শা বেগম (৬০)।
সাজ্জাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাসির মিয়ার পৈতৃক বাড়ী পুরান ঢাকার বাবুবাজারে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সামান্য জমিতে বাড়ি করলেও পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেটি ভাড়া দিয়ে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া হাবিবনগর এলাকায় স্বপরিবারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।
৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সাজ্জাদ। শত চেষ্টা করেও সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারেননি। এদের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল সাজ্জাদ। পড়াশুনায় ছিল মেধাবী। ওকে নিয়ে তারা অনেক স্বপ্ন বুনেছিলেন। আর্থিক কষাঘাতে জর্জরিত নাসির মিয়া রাজধানীর হাম্মাদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। লেখাপড়া না জানায় ৪ ছেলে ভালো কোন জায়গায় চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। তাই ছোট ছেলে সাজ্জাদকে নিয়ে স্বপ্নটা ছিল বেশি। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে বুড়ো বয়সে তিনি বংশালের একটি ছাপাখানায় শ্রমিকের কাজ নেন।
শনিবার দুপুরে কেরানীগঞ্জের বাসায় নিহত সাজ্জাদের বাবা নাসির মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, বাবারে আমার কলিজাটা ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। ওরে নিয়া কতো স্বপ্ন দেখছি। সব শেষ। এদিকে পাশেই পুত্র শোকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন মা রাশিদা বেগম।
সাজ্জাদের বড় ভাই রাশেদ জানান, তার শিশুপুত্র সিহাব এর মানত ছিল। এজন্য তিনি স্ত্রী, শ্বাশুড়ি ও দুই সন্তানকে নিয়ে হোসনী দালানে যাওয়ার মনস্থির করেন। ছোট ভাই সাজ্জাদও যাওয়ার আবদার করায় তাকে সঙ্গে নেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জের বাসা থেকে তারা হোসনী দালানের উদ্দেশে রওনা দেন।
সেখানে রাত ২টার দিকে তাজিয়া মিছিল বের করার প্রস্তুতি হচ্ছিল। হাজার হাজার লোক এতে অংশ নিতে সমেবেত হয়েছিল। তারাও সবাই মিছিলে যাওয়ার উদ্দেশে লাইনে দাড়ান। হঠাৎ পাশে থাকা একটি টিউব টাইট বোমা বিস্ফোরিত হয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে যে যেভাবে পেরেছে ছুটতে থাকে। তখনই খুব কাছে বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে তারা রাস্তায় শুয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর উঠে দেখেন ছোট ভাই সাজ্জাদের রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে আছে। চারদিকে অসংখ্য মানুষের আর্তনাদ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছেন অনেক আহত মানুষ।
বোমা হামলায় আরো আহত হন তার মেয়ে, স্ত্রী ও শ্বাশুড়ী। সবাইকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে ডাক্তার সাজ্জাদের নিহত হওয়ার কথা জানান। ভর্তি করা হয় পরিবারের অন্য সদস্যদের। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে বোমার ষ্প্রিন্টার বিদ্ধ হয়েছে।
জানা যায়, কেরানীগঞ্জে প্রথম জানাযা ও বাবুবাজারে দ্বিতীয় জানাযা শেষে শনিবার বিকালে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে সাজ্জাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।