নিয়ন মতিয়ুল
স্কুলবেলায় বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা আর বিস্ময়কর প্রযুক্তি বিষয়ে পড়তে গিয়ে প্রচণ্ডরকম অভিভূত হতাম। ভাবতাম, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আগামীর পৃথিবীকে অপূর্ব নান্দনিকতায় পাল্টে দেবে। মনজগতকেও করবে সমৃদ্ধ। যৌক্তিক, বুদ্ধিবৃত্তিক মানবিকবোধসম্পন্ন সুন্দর এক সমাজ ও সভ্যতা পাবো আমরা। সব কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসমুক্ত সংবেদনশীল এক মানবপ্রজন্ম তৈরি হবে। অসীম ব্রহ্মাণ্ডের মতো মানুষও হয়ে উঠবে সীমাহীন কৌতুহলী, অনুসন্ধিৎসু। মহাকাশের মতোই উদার হয়ে উঠবে তার মন আর মানসপট। কিন্তু আমার স্বাপ্নিক মনের এসব ভাবনা যে ভুল ছিল তা আজ পরিষ্কার বুঝতে পারছি।
এটাই সত্য যে, প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাশবিকতার নকশা মানবপ্রজাতির জিনে যে প্রবলভাবে ‘বিঁধে’ আছে, তা থেকে কোনোভাবেই আমরা মুক্ত হতে পারিনি। শুধু সভ্যতার প্রতি দায়বদ্ধতাই এটাকে কঠিনভাবে অবদমন করছে। তবে ফাঁক-ফোঁকর পেলেই লোভ আর সর্বগ্রাসী হিংস্রতার সে মুখোশ খুলে পড়ে। হোক তা সে রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিক কিংবা জাতি বা গোত্রপ্রধান। সে কারণেই আলো ঝলমল অত্যাধুনিক এ সভ্যতার অন্ধকার ভবিষ্যতের ছবি আঁকছেন অধিকাংশ বিজ্ঞানী, দার্শনিকরা। সভ্যতায় শান্তির প্রলোভন দেখিয়ে প্রবল যুদ্ধবাজ হয়ে ওঠা কিছু রাষ্ট্রনায়ক আর নেতার কাছে যুগ যুগ ধরেই জিম্মি হতে হয়েছে মানবজাতিকে।
সুদূর কিংবা নিকট অতীতে ছোটবড় যত যুদ্ধই সংঘটিত হয়েছে, শান্তি উপহারের নামে সাধারণ মানুষের রক্তই ঝরানো হয়েছে শুধু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আজ অবধি এ পৃথিবী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি না হলেও ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি যুদ্ধ, সহিংসতা আর সংঘাতে প্রতিদিন রক্ত ঝরছে। শুধু কি তাই? পুঁজিবাদী দেশগুলোর ভোগের ক্ষুধা মেটাতে কত মানুষকে যে ক্ষুধার্ত থাকতে হচ্ছে তার শেষ নেই। তবে এতকিছুর পরেও তৃতীয় বা চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি কিন্তু থেমে নেই। বরং অত্যধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তা ভয়ঙ্করভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। পারমাণবিক মারণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা কোনোভাবেই রোধ করা যায়নি। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, বর্তমান বিশ্বে পরাশক্তি দেশগুলোর কাছে যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ আছে তা দিয়ে কয়েকশ’ বার ধ্বংস করা যাবে গোটাপৃথিবীকে।
বিগত শতাব্দিজুড়ে মানবসভ্যতার আত্মবিধ্বংসীপ্রবণ এসব কর্মযজ্ঞ নিয়ে শঙ্কিত কোটি কোটি শান্তিকামী মানুষ মারণাস্ত্র উৎপাদন বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। আর পৃথিবীর অন্ধকার ভবিষ্যতের ছবি আঁকতে গিয়ে বার বার আঁতকে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে একবিংশ শতাব্দিতে এসে মানবসৃষ্ট সেই ভয়াবহতার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরো এক মহাবিপদ। সেটা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিঘাত। এ মহাবিপদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলে হু হু করে বাড়ছে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা। অস্বাভাবিকভাবে তেতে উঠছে পৃথিবী। দুই মেরুর বরফ গলছে বিপজ্জনকভাবে। এতে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে বিশ্বের উপকূলীয় দেশগুলোর বিশাল নিম্নাঞ্চল ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে। এতে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য, প্রকৃতির এই অভিঘাতকে হার মানাচ্ছে মানুষের অজ্ঞতা আর মূর্খতা। বিশেষ করে বিশ্বের রাষ্ট্রনায়ক আর রাজনীতিকদের বিজ্ঞানবিমুখ দৃষ্টিভঙ্গি ভয়ানক বিপদ ডেকে আনছে। রাজনীতিকদের উন্নয়ন নামের ‘প্রলোভন’ ফাঁদ গোটা সভ্যতাকেই হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে। রাষ্ট্রনায়কদের বিজ্ঞান ও পরিবেশবিষয়ক সীমাবদ্ধ জ্ঞান, অজ্ঞতা, মূর্খতা থেকে নেয়া বহুমুখী সিদ্ধান্ত আর তার প্রয়োগ পৃথিবীর টিকে থাকার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। তার ওপর আবার বিজ্ঞানমূর্খ, ধর্মান্ধ, প্রবলমাত্রার জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রনায়কদের সংখ্যা বিশ্বে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। যাদের কাছে পৃথিবী কোনোভাবেই নিরাপদ নয়।
যুগের পর যুগ ধরে বিশ্বের বিপজ্জনক এসব রাষ্ট্রনায়কের তালিকার সর্বশেষ সংযোজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি আপাদমস্তক মুনাফালোভী এক ব্যবসায়ী। জলবায়ু পরিবর্তন বলে কোনো কিছুই বিশ্বাসযোগ্য নয় তার কাছে। বরং এটাকে পরিবেশবিজ্ঞানীদের ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করছেন। মাঝে মাঝেই এসব নিয়ে বিজ্ঞানীদের উপহাসও করছেন। এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণসৃষ্টিকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। যে ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গেছেন মার্কিন তথা সমগ্র বিশ্বের বিজ্ঞানীরা।
বিশ্বের মোড়লখ্যাত মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন হটকারি সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন স্মরণকালের তারকাখ্যাত মার্কিন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলে গেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত পৃথিবীকে ধ্বংসের কাছে নিয়ে যাবে।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকার হকিং বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে বলেছিলেন, আমরা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের (জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বৈশ্বিক উষ্ণতা) এমন এক পর্যায়ে আছি যা আরেকটু বেশি হলে সেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব হবে না। ট্রাম্পের ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত পৃথিবীকে আরেকটি ভেনাসে (সূর্যের কাছাকাছি উষ্ণতম গ্রহ শুক্র) রূপান্তরিত করতে পারে। যেখানে থাকবে আড়াইশ’ ডিগ্রি তাপমাত্রা। আর সালফিউরিক অ্যাসিডের বৃষ্টিপাত। তবে এমন আশঙ্কাকে ট্রাম্প সাহেব ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন কিনা জীবদ্দশায় সেটা জেনে যেতে পারেননি হকিং। কিন্তু আমরা নিশ্চিত ট্রাম্প তার অজ্ঞতাবশত পরিবেশবিষয়ক ধ্যান-ধারণা থেকে একচুলও টলেননি।
এসব ঘটনায় আমি তো এতোদিন ট্রাম্পকে বিশ্বের একমাত্র ‘বিজ্ঞানমূর্খ’ রাষ্ট্রপ্রধানই মনে করছিলাম। কিন্তু সে ধারণা ভেঙে চুরমার করে দিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। গত তিন সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ নামে খ্যাত বৃহৎ রেইন ফরেস্ট (চিরহরিৎ বন) আমাজন। ৪৭টি বাংলাদেশের সমান আয়তনের যে বনাঞ্চলটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-আক্সাইড শোষণ করে আর সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে।
বিজ্ঞানীদের হিসাবে, পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের ২০ শতাংশ আসে আমাজন বন থেকে। আর বায়ুমণ্ডল থেকে প্রতিবছর শোষণ করে ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড। যে কারণে বিজ্ঞানীরা এ বনকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সেনাকর্মকর্তা থেকে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠা বোলসোনারো এই আমাজন নিয়ে ধ্বংসের খেলায় মেতে ট্রাম্পকেও অতিক্রম করে গেলেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, (অগ্নিসংযোগ থেকে সৃষ্ট!) দাবানলে প্রতি মিনিটে ১০ হাজার বর্গমিটার আমাজন বনাঞ্চল পুড়ছে। পরিবেশবিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এভাবে পুড়তে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী আন্দোলনে বিশাল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।
গত জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের কারণে আমাজনের বনাঞ্চল উজার হওয়া বেড়েছে তিনগুণ হারে। কারণটা হচ্ছে, এই লোভী অপরিণামদর্শী প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো পরিবেশবিজ্ঞানী আর আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তার তোয়াক্কা না করেই অভূতপূর্ব জীববৈচিত্রের আমাজনকে চাষযোগ্য আর বাসযোগ্য করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বন ধ্বংস করে খনিজ সম্পদ উত্তোলনসহ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও গড়ে তুলছেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ এই ধ্বংসাত্বক পরিকল্পনা তিনি ক্ষমতায় আসার আগে করে রেখেছিলেন। সে কারণে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আজ অবধি ‘পৃথিবীর এই ফুসফুসের’ ব্রাজিল অংশে ৭২ হাজার ৮৪৩টি অগ্নিকাণ্ডের (অগ্নিসংযোগ!) ঘটনা ঘটেছে।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার উপগ্রহ চিত্রেও ধরা পড়েছে আমাজনের ৯৫০৭টি নতুন দাবানলের চিত্র। এর ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে নাসা। আগুনের তীব্রতার ছবি পাঠাচ্ছে একাধিক স্যাটেলাইট। তবে বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে আগুন থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া। আমাজনের ধোঁয়া ২৭০০ কিলোমিটার দূরের ব্রাজিলের সাও পাওলোর আকাশ ঢেকে দেয়ায় সেখানে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। চারদিকে শুধুই ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্যাটেলাইট প্রকল্প কোপের্নিকাস আগুনের ধ্বংসযজ্ঞের যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে তাতে ব্রাজিল থেকে পূর্ব আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত ‘আগুন পথের’ চিহ্ন দেখা গেছে। ধোঁয়া পৌঁছে গেছে পেরু, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে অবধি। মূলত, দক্ষিণ আমেরিকার অর্ধেক মানচিত্র জুড়েই এখন ঘনকালো ধোঁয়ায় ঢাকা।
ভয়াবহতার এ দায় কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারেন না ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট মার্কন প্রেসিডেন্টের চেয়েও বিপজ্জনক। তিনি তথ্যদাতা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্পেস রিসার্চ (ইমপে) এর ওপর ভীষণ চটেছেন। ফলস্বরূপ গত মাসে ইমপের পরিচালক রিকার্ডো গ্যালভাওকে বরখাস্ত পর্যন্ত করেছেন। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ জার্মানি ও নরওয়ে সরকার ব্রাজিলের আমাজন ফান্ডে অর্থ অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও তাতে বিকার নেই বোলসোনারোর। দাতা দেশগুলোকে সোজা সাফটা বলে দিয়েছেন, তাদের অর্থের কোনো প্রয়োজন নেই ব্রাজিলের। তারা যাকে খুশি দিতে পারে।
শুধু কি ট্রাম্প আর বোলসোনারোই এমন মহাবিপদ ডেকে আনছেন পৃথিবীর? গোটা বিশ্বের সব রাজনীতিকই কি পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করতে পারেন পরিবেশ বিজ্ঞানকে? তারা আসন্ন মহাবিপদ সম্পর্কে সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন কি? প্রথমবিশ্বের দেশগুলো তো নিজেদের ভোগবিলাশে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে উন্মত্ত। তাদের কারণেই পাহাড়, সমুদ্র, বাতাস দিন দিন ভয়াবহমাত্রায় দূষিত হচ্ছে। উন্নয়নশীল আর উন্নয়নকামী তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জলবায়ু বিষয়ক কোনো ফান্ডই নেই। তারা তাকিয়ে আছে প্রথমবিশ্বের নেতা আর জাতিসংঘের মর্জির ওপর। আবার দৈব আর অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাসীরা সমুহ এ বিপদের জন্য শ্রষ্ঠার কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। অভিশাপ দিচ্ছেন ধর্মের পথ ছেড়ে বিপথে যাওয়া মানবগোষ্ঠীকে। অনেকেই এটাকে শ্রষ্ঠার শাস্তি হিসেবেও দেখতে শুরু করেছেন।তবে প্রথম তৃতীয় যারা যা-ই ভাবুন, সম্মিলিতভাবে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সবই ন্যস্ত হয়েছে নিয়তির ওপর, ভাগ্যের ওপর। উন্নয়নশীল দেশের বেশিরভাগ রাজনীতিক আর প্রভাবশালীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজেদের বংশধরদের সুখীসমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে অর্থ আর সম্পদ লুটপাটে ব্যস্ত। পৃথিবী যদি বসবাসের উপযোগিতাই হারিয়ে বসে তাহলে কোথায় তারা সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়বেন-এসব ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই।
বিশ্বের মহাবিপদ বিষয়ে সতর্ক করে স্টিফেন হকিং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিশ্বনেতার প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছিলেন। সঙ্গে এটাও বলে গেছেন, বিবর্তন মানুষের মনের লোভ ও সহিংসতা জাগিয়ে তুলছে। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তির বিকাশ ও মারাত্মক অস্ত্রগুলো মানুষের জন্য যেকোনো মুহূর্তে ধ্বংসাত্মক হতে পারে। যদিও মানবসংঘাত কমার কোনো লক্ষণই তিনি দেখতে পাননি। তাই আগামী ২০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, মানবজাতির বেঁচে থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে মহাকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্বাধীনভাবে উপনিবেশ স্থাপন।
হ্যাঁ, এমন সম্ভাবনাকে অবশ্যই কাজে লাগাবেন সেসব বিশ্বনেতা; যারা অত্যাধুনিক এ সভ্যতাকে মহাবিপর্যয়ের কবলে ফেলে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের অযোগ্য করে তুলবেন। সাধারণ মানুষের শ্রমঘামের অর্থে গড়ে তোলা প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তারা আবার পাড়ি জমাবেন অন্যকোনো গ্রহলোকে। আর আমরা সাধারণ মানুষ মহাপ্রলয়ের জন্য হাহাকার করে দুষতে থাকবো নিয়তিকে আর ভাগ্যকে!
নিয়ন মতিয়ুল : সাংবাদিক, কলাম লেখক।