মেট্রো নিউজ : রক্তখেকো মানুষের কথা শুনেছেন নিশ্চয়ই? চোখ দেখেছেন কখনও? রক্ষে করো বাবা! শুনলেই গা গুলিয়ে ওঠে শখ করে তাদের মুখ দর্শন করতে যাবো কেন? রক্ত খাওয়া ব্যপারটা আসলে কিন্তু ঠিক এতটাও বীভত্স কিছু নয়। সহজ ভাবে ভেবে দেখলে মাংস, ঘিলু, মেটে যদি তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাওয়া যায়, তৃপ্তি করে টেনে নেওয়া যায় অস্থিমজ্জা, মনের সুখে চিবনো যায় হাড়, তরুণাস্থি তবে শুধু রক্ত নিয়ে এত গা ঘিনঘিন করার কী আছে? আর চেখে না দেখলে বুঝবেন কী করে হাড়, মাংসের মতোই প্রাণী বিশেষে স্বাদ বদলায় রক্তেরও? রক্তের স্বাদ কিন্তু মোটেও শুধু নোনতা নয়। গ্রুপ অনুযায়ী বদলে যায় তার স্বাদ। দাবিটা আমাদের নয়। রক্ত নিয়ে রীতিমত গবেষণা করে ফরাসি গবেষক জন এডগার ব্রাউনিংয়ের। তিনি নাকি ফ্রান্সের নিউ ওরলিয়ানসে রিয়্যাল ভ্যাম্পায়ার কমিউনিটিরও সন্ধান পেয়েছেন।
শুধু ফ্রান্সে নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নাকি রয়েছেন হাজার হাজার ভ্যাম্পায়ার। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে এরা কি কোনও মানসিক রোগের শিকার? নাকি অতিরিক্ত গথিক নভেল পড়ার ফলে এই দশা? গবেষকরা কিন্তু জানাচ্ছেন রক্তখেকোদের আসলে প্যারানর্মাল বা অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে কোনও আগ্রহই নেই। ক্লান্তি, মাথা ব্যাথা বা পেট ব্যাথার মতো অতি সাধারণ উপসর্গ সারাতে রক্ত চোষেন তারা।
ব্রাউনিং জানাচ্ছেন এই ভ্যাম্পায়াররা আসলে আমার আপনার মতোই সাধারণ মানুষ। বহু যুগ ধরে সমাজের ট্যাবু তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। কিন্তু ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় পঞ্চদশ শতাব্দীতে রোগ সারানোর জন্য রোগীকে রক্ত খাওয়ানো হতো। পোপ অষ্টম ইনোসেন্টের চিকিত্সক নাকি পোপের অসুস্থতা সারাতে তিন যুবককে খুন করে তাদের রক্ত পোপকে খায়িয়েছিলেন। এই থেকেই পৃথিবীর বড় শহরগুলোতে ভ্যাম্পায়ার সমাজের প্রমাণ পাওয়া যায় বলে মত সোশিওলজিস্ট ডিজে উইলিয়ামসের। পরের দিকে মৃগী রোগ সারাতেও খাওয়ানো হতো রক্ত।
ষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসটা আবার একটু অন্য রকম। ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটির গবেষক রিচার্ড সাগের লেখা বইতে দেখা যাচ্ছে এই সময় রক্তকে বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক জগতের যোগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যখন অসুস্থ ব্যক্তির রক্তপান করে ‘রোগের কারণে নিজের শরীরে নিয়ে নিতেন’ ভ্যাম্পায়ার। বিশ্বাস তাতে সুস্থ হয়ে যেতেন আক্রান্ত। সম্ভবত এই সময় থেকেই ভ্যাম্পায়ারদের ভয় পেতে শুরু করে সমাজ।
ব্রাউনিংয়ের সমীক্ষা বলছে বর্তমানে আমার আপনার মতোই বিভিন্ন পেশায়, সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন ভ্যাম্পায়াররা। ইন্টারনেট যুগের আগে নিজেদের মধ্যে অল্পস্বল্প যোগাযোগ থাকলেও এখন ইন্টারনেটের প্রভাবে তারা গড়ে তুলেছে নিজেদের নেটওয়ার্ক। তবে এখনও সমাজের থেকে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে চান এরা। তাই আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই যোগাযোগ রাখেন ভ্যাম্পায়ারা।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা