আতিকুর রহমান নগরী
একদিকে মহামারী করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত পুরো দুনিয়া অপরদিকে লকডাউনের কারণে কর্মহীন দেশের মানুষ। থেমে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। এরই মাঝে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বারতাবাহী মাহে রামাযান চলমান। রহমত ও মাগফিরাতের দশক পেরিয়ে নাজাতের শেষ প্রান্তে এসে পৌছেছি।
দেশের এই নাজুক পরিস্থিতিতে আপনার যাকাত কাকে দেবেন? কারা এর সঠিক হকদার।
ইসলাম ধর্ম পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। এ গুলোর মধ্যে ‘যাকাত’ অন্যতম ভিত্তি।এ সর্ম্পকে আল্লাহ তা’লা ইরশাদ করেন অর্থ্যাৎ “এবং তোমরা আল্লাাহ তা’লার সন্তুষ্টির জন্য যাকাত আদায় করো। অত:পর তিনি উহা দ্বিগুন করে দিবেন। (সুরা: আর-রুম,আয়াত:৩৯)।
যাকাত আদায়ের ব্যাপারে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ পাক যাকাত দেয়া ফরয করেছেন যেন তোমাদের অবশিষ্ঠ সম্পদকে নির্দোশ বা নির্বিঘ্ন করে দিতে পারেন’। (আবু দাউদ শরীফ)।
যাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিচ্ছনতা। যাকাত যেহেতু অর্থসম্পদকে পুঁজিবাদের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে, মানুষের মন-মস্তিস্ককে গর্ব-অহংকার, লোভ-লালসা ও কৃপনতার মলিনতা তেকে পরিচ্ছন্নতা রাখে। এবং নিজের উপার্জিত সম্পদে সমাজের অবহেলিত শ্রেণীর দাবী-দাওয়া পূরনে উৎসাহ যোগায় এজন্য ইসলামের এই তৃতীয় স্তম্ভে নামকরণ হয় যাকাত। শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত পরিমান সম্পদ মুসলমান গরীবকে আল্লাহর ওয়াস্থে পুরোপুরি মালিক বানিয়ে দেয়াকে যাকাত বলে।
ধনি সম্পদশালী ব্যাক্তিরা মনে করেন যে যাকাতের দ্বারা সম্পদ কমে যায় তা নিছক ভুল ধারণা। কেননা আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ওয়াদা করেছেন যে,“যাকাত আদায়ের ফলে তিনি তার প্রিয় বান্দাদের সম্পদ দ্বিগুন করে দিবেন”।
যাকাত ইসলামের অন্যতম খুঁটি। ক্বোরআন-হাদিসে যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে বারবার তাগিদ করা হয়েছে। ক্বোরআন-হাদিসের অকাট্য প্রমানাদি দ্বারা যাকাতের বিধান প্রনোদিত হয়েছে। তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ কারো নেই। যাকাত অস্বীকারকারীকে শরিয়ত কাফির বলে আখ্যা দিয়েছে। কেননা ফরযের বিধান অস্বীকার করা কুফুরির অর্ন্তভুক্ত। যে তা আদায় না করবে সে ফাসিক এবং ক্বাতল হওয়ার যোগ্য। আর যে আদায় করতে বিলম্ব করবে সে গুনাহগার তার সাক্ষি গ্রহণযোগ্য নয়। (আলমগীরি: তরিকুল ইসলাম বাংলা ২য় খন্ড,পৃ.২৬৫)
যাকাতের হিসাব যে মাস থেকে: যাকাত আরবি (চন্দ্র মাসের) হিসাবানুযায়ী আদায় করতে হবে। বছরের যে কোন মাসে যাকাত আদায় করলে হয়। তবে আদায় করার সময় নিয়ত করা শর্ত।
ব্যবসার মাল যদি নেসাব পরিমাণ হয় অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা সোনা ও বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা অথবা সমপরিমাণ নগদ অর্থ হয় তবে সে মালের উপর যাকাত ফরয। শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে যাকাত আদায় করতে হবে।
সোনা হোক বা রূপা, সবধরনের ব্যবসায়ী মালে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে বিক্রয় মূল্যই গ্রহণযোগ্য ক্রয় মূল্য নয়। যেমন কারো নিকট যাকাতের যা মাল বর্তমানে আছে তার ক্রয় মূল্য ১ লক্ষ টাকা। কিন্তু বিক্রয় মূল্য ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। উক্ত মালের ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার উপরই যাকাত ওয়াজিব।
মিসকিনকে যাকাত প্রদান করতে হবে। মিসকিন ফকির বলতে সেসব মুসলিম নর-নারী বুঝায় যাদের নিকট জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি যেমন: অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা নেই অথবা আছে তবে তা প্রয়োজন মেটাবার নয়।
ঋণগ্রস্থ মানুষ। যার নিকট ঋণ পরিশোধ করার উপায় নেই। সেসব নিঃস্ব নওমুসলিম যাদের মন জয় করা মুসলমানদের দরকার। আল্লাহর পথের মুজাহিদগন যারা দুস্থ এবং নিঃস্ব হওয়ার কারনে জিহাদে অংশগ্রহণ থেকে বিরত। অথবা সেসব হাজীগন যাদের টাকা-পয়সা ও পাথেয় শেষ হওয়ার কারনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করতে অপারগ।
যাকাতের এই খাত সমূহ ব্যতিত অন্যস্থানে ব্যয় করা বৈধ হবেনা। যেসব দ্বীনি মাদ্রসা গুলোর ‘লিল্লাহ ফান্ড তথা গরীব ফান্ড’ রয়েছে তাতে যাকাতের অর্থ দেয়া জায়েয অন্যথায় জায়েয হবেনা।
যাকাতের জাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন, মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী, হাসপাতালের ডাক্তার এবং অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দের বেতন/ভাতা আদায় করা জায়েয হবে না। (জাওয়াহিরুল ফাতওয়া ১ম খন্ড হতে সংকলিত)
লেখক: তরুণ আলেম, সাংবাদিক