এ খান, বিডি মেট্রোনিউজ ॥ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিল হতে যাচ্ছে ১৪ মে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে জাকজমকপূর্ণ সম্মেলন হবে। সারাদেশ থেকেই বিপুল সংখ্যক কাউন্সিলর, ডেলিগেট, কর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের পদভারে মুখরিত থাকবে কাউন্সিল চত্বর।
এরশাদ এবং তাঁর জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিয়ে সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে ইদানীং আর আগের মতো খুব বেশি আগ্রহ না থাকলেও কাউন্সিল নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। জাতীয় পার্টির তিন মন্ত্রীর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ, এরশাদের নিজেরও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ, সংসদ থেকে দলীয় সদস্যদের পদত্যাগের ঘোষণা আসে কিনা জানার জন্যই প্রধানত আগ্রহ বেশি।
পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের নিরসন কিভাবে করা হবে রওশন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়া উদ্দিন বাবলুদের সাথে সমঝোতা, তারা কাউন্সিলে যোগ দেন না পৃথক অবস্থানেই থাকেন প্রভূতি নিয়েও উৎসাহী দৃষ্টি অনেকের।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদের জাতীয় পার্টির এককভাবে ফের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নাথাকলেও ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি হিসেবে থাকার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা সে সুযোগটি হারিয়েছেন। প্রধানত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের সরকারের অনুগত বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটানোর মাধ্যমে। কি পরিস্থিতিতে এ ভূমিকা নিতে বাধ্য হন তার ব্যাখ্যা এরশাদ দেশবাসীর সামনে বিভিন্ন তুলে ধরলেও তা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তার হাত বাঁধা, আজও তিনি শক্ত মানুষ নন, এ ধরনের কথা বলে এরশাদ মানুষের সহানুভূতি লাভের চেষ্টা করেছেন।
এ কথার যথার্থতা থাকলেও মানুষের মধ্যে এ প্রশ্নও রয়েছে এতটা ভীত বিহবল থেকে কি রাজনৈতিক ময়দানে আস্থাশীল সম্মানজনক অবস্থান পাওয়া যায়।
তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন এরশাদের প্রতি বৈরি আচরণ করেছেন। খালেদা জিয়া মামলার পর মামলা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া উভয়েই তাঁকে মামলার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দেয়ার আশ্বাস দিয়েও এরশাদকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। মামলা থেকে অব্যাহতি দেননি। কোন সরকারই এ ব্যাপারে সুষ্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি। জাতীয় পার্টির নেতাদের অভিযোগ এরশাদ যখনই নড়াচড়া করেছেন, মুখ খুলেছেন তখনই মামলার খড়গ সামনে আনা হয়। দুই সরকারের সময়েই এরশাদকে কাবু করে রাখা হয়। নিরুপায় এরশাদকে অসহায় আত্মসমর্পনের পথে যেতে হয়।
জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা দুর্বলতার এই দিকটিতে সহানুভূতিশীল হলেও রাজনৈতিক মহল, সাধারণ মানুষও এখন আর বিষয়টি সহানুভূতির সাথে দেখেন না। তাদের কথা রাজনীতিতে ঝুঁকি থাকবেই এবং এরশাদকে সেই ঝুঁকি নিতে হবে। জেলভীতির সুযোগ নেই। অবশ্য বয়সের দিকটিই এক্ষেত্রে এরশাদকে কাবু করে রেখেছে।
এরশাদের ঐকান্তিক ইচ্ছা মৃত্যুর পর দলের নেতা-কর্মীরা যেন তাঁকে স্মরণ করেন। দলীয় একাধিক অনুষ্ঠানেও তিনি তাঁর অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পার্টিই যদি না থাকে, ব্যক্তি-গোষ্ঠী স্বার্থে বিভক্তির রেখা ক্রম প্রসারমানই থাকে তাহলে তাঁর ইচ্ছাও অপূর্ণই থেকে যাবে।
এরশাদের অবর্তমানে ছোট ভাই জি এম কাদের বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন, প্রধানত এ আশা নিয়েই জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরম বিশ্বস্ত, সৎ, সজ্জন হিসেবে সর্বমহলে সমাদৃত ভাইকে দায়িত্ব দিয়ে এরশাদ স্বস্তি পেলেও দলের মধ্যে এ নিয়ে বিরোধ অমীমাংসিতই রয়েছে। রওশন এরশাদ এবং তিনমন্ত্রী ও তাদের অনুসারী সংখ্যাগরিষ্ট এমপিরা তা মেনে নিতে পারেননি। মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া জিয়াউদ্দিন বাবলু ও তার অনুগামীরা রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব হিসেবে মেনে নেননি।
কাউন্সিলে রওশন এরশাদ এবং ব্যরিষ্টার আনিসসহ তিন মন্ত্রী ও এমপিদের অধিকাংশই উপস্থিত নাও থাকতে পারেন। রওশন এরশাদ যদি শেষপর্যন্ত শরিক হনও মন্ত্রী ও এমপিদের আসার সম্ভাবনা কম। এই অংশের এক প্রভাবশালী নেতা অবশ্য এটাও স্বীকার করেন যে এরশাদের বাইরে গিয়ে জাতীয় পার্টির নামে কোন অবস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতাও তাদের তাড়িত করে।
তিনি এও বলেন, এরশাদ ও রওশন এরশাদের মধ্যে কার্যত কোন বিরোধ নেই। পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা এলেও মূলত তাদের অবস্থান অভিন্ন। মন্ত্রী ও এমপিদের অনেকে বর্তমানে ভিন্নতর চিন্তা করলেও সময়মত তারাও এরশাদের করুণাপ্রার্থী হবেন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
জাতীয় পার্টি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, আগামী কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা অনুপস্থিত থাকলেও এবং মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ না করলেও কাউন্সিলে বড় ধরনের একটি ঘোষনা আসবে। চমক সৃষ্টিকারি এ ঘোষনা দলকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করবে এবং সাধারণের মধ্যে নতুন আস্থার জন্ম দেবে। সরকারের উচ্চতম পর্যায়ে আলোচনা করেই এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়া হবে।