এ খান ॥ বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করা হলেও এর কোন কার্যকারিতা নেই। সংস্থাটি আইনানুগ স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু তিন বছরেও এর বিধি বিধান প্রণীত হয়নি। সাংগঠনিক কাঠামোই স্থির করা হয়নি। জনবল নিয়োগ করা হয়নি। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় একটি অস্থায়ী অফিস করা হলেও বিভাগীয়, জেলা পর্যায়ে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত কার্যকর করা হয়নি।
এ ছাড়া খাদ্য ল্যাবরেটরি স্থাপন, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক, পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ, রোডম্যাপ, এ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, মোবাইল ল্যাবরেটরি ইনস্ট্রুমেন্টস সংগ্রহ ছাড়াও প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো অপূর্ণ রয়ে গেছে। এরফলে এই কর্তৃপক্ষের কোন সুফলই দেশের মানুষ পাচ্ছেনা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা যায়, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আইনগতভাবে গঠন করা হলেও এর বাস্তব কোন কার্যক্রম নেই। একটি স্বাধীন বিজ্ঞানভিত্তিক কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এই কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলাই সরকারের উদ্দেশ্যে। ভেজালে ছেয়ে গেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। ফরমালিনসহ খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের দূষণ মিশ্রন, বিচিত্র অনুজীবের উপস্থিতি, ভেজাল মিশ্রন, অনিরাপদ দ্রব্যাদি দ্বারা মোড়কীকরণ, বিভ্রান্তিমূলক লেভেলিংসহ নানা অনিয়ম জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদানে ছেয়ে আছে অভ্যন্তরীনভাবে উৎপাদিত ও আমদানীকৃত বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য।
খাদ্য নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি সংস্থা থাকলেও এদের উল্লেখ করার মতো তৎপরতা নেই। এসব সংস্থার কাজে সমন্বয়সাধন এবং কার্যকর করা এই কর্তৃপক্ষের মুখ্য দায়িত্ব।
মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এই তাগিদ থেকে ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর নিরাপদ খাদ্য আইন জারি করা হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ উৎপাদিত ও আমদানীকৃত খাদ্যপণ্য, এসবের বিপণন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের কার্যকলাপে সমন্বয়, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কার্যকারিতার উন্নতি সাধনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য রক্ষাই এই উদ্দেশ্য।
এজন্য আধুনিক ও স্বীকৃত নিরাপদ মান নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে নিয়মিত জোরালো নজরদারি, খাদ্য উৎপাদন , আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও সমন্বয় করবে এই কর্তৃপক্ষ।
সর্বাগ্রে ভোক্তার স্বাথ রক্ষা, খাদ্য আইনসমূহ প্রয়োগসহ জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়সমুহ কার্যকর করা এর অন্যতম কাজ। কিন্তু এই কর্তৃপক্ষ এসব কিছুই করতে পারেনি।
৬৪টি জেলায় সমসংখ্যক বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত ও সাতটি মন্ত্রণালয়ে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত আজও গঠন করা হয়নি। মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে নিরাপদ খাদ্য আইনের এখনও অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। খাদ্য অধিদপ্তরের ৪৬ জন কারিগরি খাদ্য পরিদর্শককে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকের দায়িত্ব দেয়ার কথা। আজও তা করা হয়নি। এ সংক্রান্ত কার্যক্রম কেবল প্রজ্ঞাপন জারির মধ্যেই সীমিত রয়েছে। কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামোই আজও অনুমোদিত হয়নি।
বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত কার্যকর করতে ৭০ জন সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করতে হবে। খাদ্য ল্যাবরেটরির টেস্ট প্যারামিটার টেস্টিং ফ্যাসিলিটি-সমূহ নির্ধারণ, মোবাইল ল্যাবরেটরি, ইন্সপেকশন ভ্যান ও কুইক টেস্ট ডিভাইস সংগ্রহের সিদ্ধান্ত এক বছর ধরে ঝুলে আছে। একটি এ্যাকশন প্লানই করা হয়নি। ৫০ জন কর্মচারি নিয়োগ জরুরি হলেও এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগই নেই।
৩০ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাসহ উপদেষ্টা পরিষদ, ৩৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি এবং সাত বিভাগে অফিস, প্রয়োজনীয় জনবল দেয়ার বিধান থাকলেও এসবের কিছুই করা হয়নি। এ পর্যন্ত একজন চেয়ারম্যান, চারজন সদস্য, একজন সচিব ও পাঁচজন পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদেরও যাবতীয় কার্যক্রম কাগজেপত্রেই সীমিত।