এরশাদ-রওশন সমঝোতা
বিডি মেট্রোনিউজ ॥ এরশাদের জতীয় পার্টি আরেক দফা ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেল। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়াই নয়, দলকে আরও শক্তিশালী করে আগামী নির্বাচনে একটা সম্মানজনক অবস্থান করে নেয়ার দৃঢ় মনমানসিকতা নিয়েই তারা পরবর্তী কর্মপন্থা নিতে একমত হয়েছেন।
জাতীয় পার্টি থেকে বিভিন্ন সময়ে বেরিয়ে যাওয়া অংশগুলোকে এবং নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকাদের মূল দূরে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতৃস্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পার্টি প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বৃহত্তর স্বার্থ ও ভবিষ্যত চিন্তায় রওশন এরশাদকে পার্টির বিকল্প চেয়ারম্যান বা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদে আসীন করার ঘোষনা দিয়েছেন।
১৪ মে দলের কাউন্সিল সামনে রেখে রওশন এরশাদ ও তাঁর অনুসারীরা এরশাদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছিলেন। রওশনকে চেয়ারম্যান করে পৃথক অবস্থান নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। পার্টি বিভক্ত করা তাদেরও উদ্দেশ্যে নয়। দাবি আদায়ে প্রবল চাপ রাখা ছাড়া বিকল্পও নেই তাদের। কো-চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদের ও মহাসচিব পদে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে সরিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারের নিয়োগের বিপক্ষে ছিলেন তারা। এ সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি ছিল তাদের।
জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান নিয়োগের খুব একটা বিপক্ষে নন রওশন এরশাদ। এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদেরের সাথে ভাবী রওশনের পারিবারিক, ব্যক্তিগত সম্পর্ক সুমধুর। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-বিরোধও কখনই প্রকট কিছু ছিল না। কো-চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরের নিয়োগের বিপক্ষে তাঁর অবস্থান ছিল একান্ত ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অভিলাস পূরণে অন্তরায় মনে করে।
এরশাদের অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেতে বরাবরই আগ্রহী ছিলেন রওশন। এরশাদ বিভিন্ন সময়ে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। রওশন স্থায়ীভাবেই এ পদ পেতে আগ্রহী। জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়ায় তা রওশনের রাজনৈতিক অভিলাস পূরণে বড় বাঁধা হয়ে আসবে বলেই মনে করেন রওশন এরশাদ। রাজনৈতিক আদর্শগত কোন কারণে নয়, ব্যক্তিগত অভিলাস পূরণে অনিশ্চয়তা ও বাধা থেকেই রওশন ও তাঁর অনুসারীদের কাছ থেকে এরশাদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা এসেছে বলে রওশন এরশাদের ঘনিষ্টসূত্রে জানা যায়।
জিএম কাদেরের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ে। প্রতিপক্ষ মনে করে সিনিয়র নেতাদের একটা অংশ তাঁর পক্ষে নন। তবে সাধারণভাবে দলের নেতা-কর্মীরা, বিশেষ করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে জিএম কাদের ব্যাপকভাবে সমাদৃত। কারণ প্রধানত্ব তাঁর ব্যক্তিগত আচার-আচরণ স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান ও বক্তব্য, দুর্নীতির অভিযোগমুক্ত সৎ পরিশিলীত, পারিমার্জিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে। জাতীয় পার্টিই নয়, বড় পার্টিগুলোতেও যার নজির খুব বেশি নেই। জিএম কাদেরের এই গ্রহণযোগ্যতা কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও সৃষ্ট জনপ্রিয়তা জাতীয় পার্টির সিনিয়র অনেক নেতার ঈর্ষার কারণ হয়ে আছে।
রওশনকে সামনে রেখে তাদের জোটবদ্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ এটি। রুহুল আমিন হাওলাদারকে নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন কোন মাথাব্যথা নেই। রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করার ফলে তাঁর অনুসারীরা পার্টিতে নিজেদের শক্ত অবস্থান করে নিতে পারবেন বলে তারাও সন্তুষ্ট।
এরশাদ ও রওশন এরশাদ উভয়েই পার্টিকে শক্তিশালী করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। সরকারের উপর মহল থেকেও এ ব্যাপারে তাদের উপর চাপ রয়েছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যাতে একটি ভাল অবস্থান করে নিতে পারে সেজন্যে সরকারের দিক থেকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এরশাদ ও তাঁর মন্ত্রীদের এ পর্যায়েই সরকার থেকে পদত্যাগ না করে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। আগামী বছরের প্রথমার্ধে তারা পদত্যাগের কথা ভাবছেন।
এর আগে সারাদেশে পার্টি গুছিয়ে নিতে চান। কাউন্সিলে লক্ষাধিক কর্মী-সমর্থকের ঘটানোর কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। হতাশ কর্মীরা এরশাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, কথাবর্তায় দারুণভাবে বিভ্রান্ত, পার্টিবিমুখ হয়ে পড়েছেন।
১৪ মে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে এরশাদের সুস্পষ্ট সুদৃঢ় বক্তব্য কর্মীদের মধ্যে নতুন প্রাণ সৃষ্টি করতে পারে। জাতীয় পার্টিতে এরশাদের নেতৃত্বের বাইরে অবস্থানরত গ্রুপগুলোকে মূল জাতীয় পার্টিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রয়াত কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন অংশকে এরশাদের নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনতে প্রাথমিক পর্যায়ের কথাবার্তাও শুরু হয়েছে। এই অংশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সাথে রওশন এরশাদ আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। জিএম কাদেরও তাঁদের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সাথে কথা বলছেন। কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন এই অংশেরও এরশাদের বাইরে থাকার ইচ্ছা নেই। এরশাদের দ্রুত পরিবর্তনশীল রাজনীতির কারণে তারা ভিন্ন অবস্থান নেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাপাকেও মূল জাতীয় পার্টিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে এ পর্যায়ে জাপার একিভূত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তারা জোট গঠন করতে পারেন।