দেশে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নেই ॥ খালেদা

বিডি মেট্রোনিউজ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নেই। তবুও সরকার দাবি করছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যা কিছু ঘটছে তা সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

এই চলমান সংকট নিরসনে আবারো সংলাপে বসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান শাসকেরাও অন্যের শক্তির ওপর ভর করে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তাই সরকারকে বলব, দেশের অভ্যন্তরে যে সংকট সৃষ্টি করেছেন, তা দেশের ভেতরেই আলাপ-আলোচনার পথে নিরসন করুন। কারণ সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। আর সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করবেন না।’

শনিবার সন্ধ্যায় কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউটের স্বাধীনতা মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল জাগপা প্রতিষ্ঠা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত অর্থের প্রসঙ্গ তুলে খালেদা জিয়া বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে একটি মামলার রায় নিয়ে এখন আমাদের দেশের ব্যাপক আলোচনা চলছে। কি সে মামলা? এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল। সেই মামলার নথিতেই আছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি একাউান্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ তিনশ’ মিলিয়ন ডলার জমা আছে। এই টাকার কোথা থেকে গেছে। এই টাকার উৎস কি? এভাবে তাদের আরো কত টাকা আছে, দেশের মানুষ তা জানতে চায়। দেশের জনগণ মনে করে এই টাকা তাদের টাকা। এভাবে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে।’

এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিৎ দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ওই টাকা ফিরিয়ে আনা দরকার। কিন্তু এই টাকার ব্যাপারে সরকার নিরব। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার এই টাকার কথা ধামাচাপা দিতে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতা করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। কেবল তাই নয়, কারারুদ্ধ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও ওই মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা প্রচারণা, অত্যাচার, নানা ইস্যু সৃষ্টি করে সরকার তাদের অপরাধ আড়াল করছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মানুষ খুন হচ্ছে। নারী ও শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত তিন মাসে পত্রিকার হিসাবে দেড় হাজার লোক খুন হয়ে গেছে। দুর্নীতি লুটপাট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। আইনের শাসন ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। জুলুম ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। দেশে শান্তি ও নাগরিকদের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য যে সেখানে আছেন, সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে।

দেশের জঙ্গিবাদের উত্থান প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে প্রথম জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছিল। ওই সময়ে প্রকৃত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের আড়াল করে আওয়ামী লীগ দায় চাপিয়েছিল বিএনপি ও বিরোধী দলের ওপর। বিএনপি ক্ষমতায় এসে জঙ্গিবাদী তৎপরতাকে কঠোর হস্তে দমন করেছিল। জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা হয়েছিলো। আজ আবার সেই জঙ্গিবাদের উত্থানের আলামত দেখে আমরা দেশবাসীর সঙ্গে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বর্তমান সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ও আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করে দিয়ে তারাই (সরকার) দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের পথ করে দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts