অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পুলিশের প্রতি আইজিপির নির্দেশ

বিডি মেট্রোনিউজ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে আরও সতর্ক ও তৎপর থাকার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম।

আইজিপি আজ সোমবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের প্রথম ত্রৈ-মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় (জানুয়ারি-মার্চ) সভাপতির বক্তব্যে এ নির্দেশ দেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ সভায় সকল পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ প্রধান বলেন, শুধুমাত্র মামলা নিয়ে, তদন্ত করে সমাজে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অপরাধ প্রতিরোধে জনগণ তথা কমিউনিটি পুলিশকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পুলিশি কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। প্রতিরোধমূলক পুলিশিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। জঙ্গি কার্যক্রম সম্পর্কে পুলিশকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, ভাড়াটিয়া, ভাসমান ও অস্থায়ী আগন্তকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তাদের সঠিক পরিচয় শনাক্ত করতে হবে। অপরাধী ও সন্ত্রাসী চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে কমিউনিটি পুলিশিকে সম্পৃক্ত করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের আহবান জানান তিনি।

আইজিপি বলেন, মাদক আমাদের সমাজে বড় সমস্যা। মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তিনি গ্রামে গ্রামে মাদক নির্মূল কমিটি গঠনের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিন। তিনি বলেন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে মাদকের ক্ষতিকর দিকসমূহ তুলে ধরতে হবে। তাদেরকে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে সচেতন করতে হবে। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দেন আইজিপি।

আইজিপি জেলা পুলিশ সুপারগণকে খুনের মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অপরাধীদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। তিনি উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য দ্রুত ধ্বংস করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন।

সভায় নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, দস্যুতা ইত্যাদি মামলা বিশেষ গুরুত্বসহকারে তদন্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় জানানো হয়, মামলার তথ্য ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিডিএমএস) অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। সিডিএমএস-এ মামলার নথি হালনাগাদ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে তাগিদ দেয়া হয়।

সভায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ জহিরুল ইসমাল ভূঁইয়া গত কোয়ার্টারের (জানুয়ারি-মার্চ/১৬) সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। দেশব্যাপী অপহরণ, খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী ও শিশু পাচার, অস্ত্র উদ্ধার, মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সভায় পর্যালোচনা করা হয়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত কোয়ার্টারের তুলনায় ভাল। আলোচ্য কোয়ার্টারে গত বছরের একই কোয়ার্টারের তুলনায় সারাদেশে মামলার সংখ্যা কমেছে। ২০১৫ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে সারাদেশে মোট মামলা হয়েছে ৪৪ হাজার ২শ ১৫টি। আলোচ্য  কোয়ার্টারে অর্থ্যাৎ জানুয়ারি-মার্চ/২০১৬ সময়ে মামলার সংখ্যা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ২শ ৬৯টি । সারাদেশে আলোচ্য সময়ে খুন, দ্রুত বিচার, দাঙ্গা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন ইত্যাদি মামলার পরিমাণ কমেছে।

অপরদিকে ডাকাতি, দস্যুতা, অপহরণ, সিঁধেল চুরি, চুরি মামলার সংখ্যা বেড়েছে। একই সময়ে মাদকদ্রব্য এবং চোরাচালান দ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণ বেড়েছে। আলোচিত সময়ে পুলিশ কর্তৃক বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণও বেড়েছে।

আলোচ্য কোয়ার্টারে মোটর কার, মাইক্রোবাস, জিপ, মোটর সাইকেল, বেবি ট্যাক্সিসহ বিভিন্ন ধরণের ৫শ ৬২টি গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। ২০১৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ কোয়ার্টারে গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে ৬শ ২৩টি। আলোচ্য কোয়ার্টারে ৫শ ৬২টি চুরি যাওয়া গাড়ির মধ্যে ৪শ ৪৬টি গাড়ি উদ্ধার হয়েছে, গাড়ি উদ্ধারের হার শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশ।

সভায় ব্লগার হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় জানানো হয়, ১১টি ব্লগার হত্যা মামলার মধ্যে একটি মামলার বিচার হয়েছে। তিনটি মামলা বিচারধীন এবং সাতটি মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।

জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে গিয়ে পুলিশ সদস্যগণ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধাবোধ করেন না। জননিরাপত্তা বিধানকালে পুলিশ হতাহতের ঘটনায় সারাদেশে বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে মোট ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

সভায় পুলিশ টেলিকম এন্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট এর অতিরিক্ত আইজিপি অমূল্য ভূষন বড়ুয়া, এসবির অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ’র রেক্টর ফাতেমা বেগম, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশনস্) মোঃ মোখলেসুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল মোঃ নজিবুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, এপিবিএন’র অতিরিক্ত আইজিপি সিদ্দিকুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (ফিন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট) মোঃ আবুল কাশেম প্রমুখ এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যসূত্র : এআইজি (মিডিয়া এন্ড পিআর), বাংলাদেশ পুলিশ

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts