রাঙামাটিতে “হিলস” এর প্রথম সম্মেলন

হিল ই-কমার্স সোসাইটির উদ্যোগে ২৩-২৪ ডিসেম্বর দুইদিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো রাঙামাটিতে। সম্মেলনে সারাদেশের শতাধিক উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনের প্রথম দিন ২৩ ডিসেম্বর বেলা ১১ টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সূচনা করেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার, এমপি। এসময় সম্মেলন পতাকা উত্তোলন করেন রাঙামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুজ্জামান মহসিন রোমান ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন হিলস এর এডমিন মনি পাহাড়ী।

প্রথম দিনের এই আয়োজনটি হয় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে। পুরো প্রাঙ্গন উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে ছিল। উৎসবকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছিল বাঁশের তৈরি মোনঘর, যার ইঝোর অর্থাৎ বারান্দায় বসে বেইনে কাপড় বুনছিলেন এক পাহাড়ি মেয়ে আর বাঁশ দিয়ে হাল্লোং বানাচ্ছিলেন কারিগর। এ সময় প্রাঙ্গনের বড় গাছের নিচে বসে পাহাড়ি পোশাক পরিহিত রক যুবক বাঁশি বাজিয়ে চলছিলেন আপন মনে। মনোঘর এর কিছুদূরে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী নানানকিছু নিয়ে সেজেছিলো প্রদর্শনী স্টল। সেখানে ছিল পাহাড়ের পোশাক, অলংকার, ফল, সবজি, পিঠা, শাল, মাফলার ইত্যাদি। এসব ঘুরে দেখে অতিথিবর্গ প্রবেশ করেন অডিটোরিয়ামে। সেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অবদান ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দীপংকর তালুকদার, এমপি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অবদানকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তাঁর এলাকায় হিলস এর এই আয়োজনকে তিনি সাধুবাদ জানান এবং তাঁর দিক থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন শহীদুজ্জামান মহসিন রোমান, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, রাঙামাটি সদর, আবদুল ওয়াদুদ, সভাপতি, রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি,  সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, সভাপতি, রাঙামাটি প্রেসক্লাব, শাওন ফরিদ, লেখক, গবেষক ও সাধারণ সম্পাদক, রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড, মোহাম্মদ ওমর ফারুক, সভাপতি, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা। মঞ্চে আরও উপবিষ্ট ছিলেন হিলস এর সিনিয়র মডারেটর ননিকা চাকমা।। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন হিলস এর এডমিন মনি পাহাড়ী।

প্রথম পর্বে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করার সাথে সাথে বাংলা ঢোল এর অসাধারণ ঝংকার আর সবার হাতে উড়তে থাকা রঙিন ফিতার মাধ্যমে এক অপূর্ব পরিবেশ সৃষ্ট হয়। বিস্ময় আর মুগ্ধতার মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম পর্বটি।

দুপুরের বিরতিতে আরেকটি মজার বিষয় ছিল খাবার পরিবেশনারীতিতে। বাঁশের তৈরি মেজাং এর উপর খাবার প্লেট সাজিয়ে খাবার দেয়াটা অনেকের জন্য চমকপ্রদ ছিল। খাবারেও ছিল পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী নানানকিছু।

মধ্যাহ্নভোজন শেষে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে ছিলো সেমিনার। সেমিনারের বিষয় ছিলো “দেশীয় পণ্য প্রসারে পার্বত্য চট্টগ্রামের ই-কমার্স গ্রুপ হিসেবে হিলস এর ভূমিকা ও সমন্বিত প্রয়াস”। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নিখিল কুমার চাকমা, চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি। তিনি বলেন, ৪০ হাজার সদস্যের হিল ই- কমার্স সোসাইটি’র সাথে না হলেও ২ লক্ষ মানুষের যোগাযোগ আছে যদি পরিবারপ্রতি ৫ জনও হিসেব করা হয়। মাত্র ৭ মাসে এখানে পৌঁছানোটা সহজ কথা নয়। নিজ জায়গা থেকে যতোটা সহযোগিতা করা সম্ভব সবটাই তিনি করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ মামুন, এডিসি জেনারেল (সার্বিক), তাপস রঞ্জন ঘোষ, এএসপি, সদর সার্কেল, রাঙামাটি, বিপ্লব চাকমা,পরিচালক, নাসিব কেন্দ্রীয় কমিটি এবং নির্বাহী পরিচালক, আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, রাঙামাটি, মনোয়ারা বেগম সভাপতি, রাঙামাটি উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। সেমিনার পেপার উপস্থাপন করেন মোহাম্মদ ওমর ফারুক, মেম্বার সুপ্রিম বোর্ড, হিল ই-কমার্স সোসাইটি।
দেশীয় প্লাটফর্ম হিসেবে হিলস এর উদ্বোধনী পর্বের বিশেষ সংযোজন ছিলো দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান। তাঁরা হলেন রণজিৎ কুমার বড়ুয়া ও আ ব ম আব্দুর রব (মরণোত্তর)। দ্বিতীয় পর্বে হিল এর ১৭ জন লাখপতি সেলার এর হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেয়া হয়। প্রথমদিনের শেষ আয়োজন ছিলো পাহাড় সমতলের বিভিন্ন জাতিসত্তার ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান, বাদ্যযন্ত্র ও জাদুর অনন্য পারফরম্যান্স এর সম্মিলনে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

দ্বিতীয়দিন সকাল থেকে শুরু হয় কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণ। নৌ ভ্রমণ শেষে পৌঁছানো হয় বালুখালির আমলকি দ্বীপে। সেখানে বনভোজন, খেলাধূলা, রাফল ড্র, সংগীত ও জাদু প্রদর্শিত হয়। এসবের মাঝে কিছু সময়ের জন্য ক্রেতা উদ্যোক্তার মাঝে ছোট্ট মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। দুইদিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আশিক সুমন ও এলি চাকমা।

সমগ্র আয়োজন নিয়ে মনি পাহাড়ী বলেন, সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে আগানোর স্বপ্ন দেখে হিলস। আর সে কারণেই সারাদেশের উদ্যোক্তা ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সম্মেলনে প্রথম থেকে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকে যুক্ত করার চেষ্টা ছিলো আমাদের। কিন্তু মনের মধ্যে দ্বিধা ছিলো। মাত্র সাত মাস আগে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটিকে কতোটা গুরুত্ব সহকারে দেখবেন সকলে। কিন্তু সকল দ্বিধা ভুলিয়ে হিল সম্মেলনে এসেছেন এই জনপদের সকল অঙ্গনের সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা ব্যক্তিবর্গ। সমগ্র আয়োজনে সম্মানিত অতিথিবর্গ, পাহাড়ের অন্যান্য ই কমার্স এর এডমিন ও গ্রুপ মেম্বার, ডিজাইনার, শিল্পীবৃন্দ, স্বেচ্ছাসেবক, পরিচালক, এডমিন, মডারেটর, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ক্রেতা উদ্যোক্তা ও স্পন্সরসহ সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদেরকে আরও রঙিন করেছে। নেপথ্যে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন রুনেল চাকমা, পরিচালক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের সকলের প্রতিও আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।#

Print Friendly

Related Posts