বদরুজ্জামান জামান, প্যারিস থেকে-
‘অমর একুশ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে সাহিত্যের ছোটোকাগজ ‘স্রোতে’র আয়োজনে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হল ‘একুশের কবিতা পাঠ ও আলোচনা সভা’ ।
আবৃত্তিশিল্পী সাইফুল ইসলামের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় গত রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় প্যারিসের একটি হলে অনুষ্ঠিত হয়।
শুরুতে অমর একুশের প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন স্রোত সম্পাদক কবি বদরুজ্জামান জামান।
একুশ নিয়ে লিখা প্রসিদ্ধ কবিতাসমূহের আবৃত্তি ও স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নেন- আবৃত্তিশিল্পী মুনির কাদের, আবৃত্তিশিল্পী মোহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ,
ছড়াকার লোকমান আহমদ আপন , সাংস্কৃতিককর্মী লিমা খান, সংগীতশিল্পী ইসরাত খানম ফ্লোরা, আবৃত্তিশিল্পী ও অভিনেতা গিয়াস বাবু,
সাংস্কৃতিককর্মী মোহাম্মাদ সেলিম আহমদ, সাংস্কৃতিককর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস সুমি, অভিনেতা সোয়েব মোজাম্মেল,
স্রোত সম্পাদক কবি বদরুজ্জামান জামান, আবৃত্তিশিল্পী সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
সংগীত পরিবেশন করেন- সংগীতশিল্পী কুমকুম সাঈদা , হোমায়রা শারমিন কাকলি, প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নেন – সংগীতশিল্পী আরিফ রানা, এডভোকেট রামেন্দু কুমার চন্দ, চলচ্চিত্রকার প্রকাশ রায় ও আবৃত্তিশিল্পী রাহুল চৌধুরী ।
প্যারিসে যখন ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশে তখন রাত বারটা। সাতটা এক মিনিট বাংলাদেশের একুশের প্রথম প্রহর হিসাব করে
সমবেত স্বরে গাওয়া হয় একুশ নিয়ে সৃষ্ট অমর সংগীত- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভূলিতে পারি।
আলোচনা ও প্রবন্ধে উঠে এসেছে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ভাষার শুদ্ধ চর্চা এবং বিজাতীয় আগ্রাসন থেকে বাংলা ভাষাকে মুক্ত করা বিশেষ করে
সার্বিকভাবে বাংলা ভাষার শুদ্ধ চর্চা। তাছাড়া প্রবাসে বাংলা ভাষার এই চর্চা অব্যাহত রাখা এবং এখানে বেড়ে উঠা এই প্রজন্মকে বাংলা শিখানোর জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানানো হয়।
প্রবন্ধে বলা হয়- ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশের প্রথম সফল গণঅভ্যুত্থান এবং শাসকচক্রের বিরুদ্ধে প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
মূলত ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ । সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ধর্মঘট পালিত হয়।ভাষার দাবিতে এটিই ছিল প্রথম ধর্মঘট। আর চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে।
বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রথম সফল সংগ্রাম ছিল এ ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পায় ।বাঙালির আত্মপরিচয়ে পরিচিত হওয়ার অনুপ্রেরণা পায় এবং ন্যায্য দাবি আদায়ে সাোচ্চার হয়ে ওঠে। তাই পরবর্তীকালে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে
বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় । ফলে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি ।
আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একুশের চেতনার উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । বাঙালি জাতির মনন-মানসে একুশ নব সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ ঘটায় । আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিতে একুশের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ।
বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় একুশের পদচারণা দেখা যায় । কবি-সাহিত্যিকগণ একুশকে উপজীব্য করে রচনা করেছেন অসংখ্য সাহিত্যকর্ম ।