এ খান ॥ বাংলাদেশ-ভুটান-নেপাল-ভারত ‘‘বি বি আই এন’’-চার দেশীয় সড়ক যোগাযোগ আগামী জুলাই থেকেই শুরু হচ্ছে। ভুটান আগামী মাসেই এ ব্যাপারে সম্পাদিত চুক্তি রেটিফাই করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত, বাংলাদেশ আগেই চুক্তি রেটিফাই করেছে। নেপাল করেছে গতমাসে। চুক্তি চার দেশ রেটিফাই করার পরই প্রটোকল স্বাক্ষর হবে। জুন মাসেই চার দেশের মধ্যে প্রটোকল স্বাক্ষর হবে। সড়ক, মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে আখাউড়া-আগরতলা রেল ও সড়ক যোগাযোগ চালু ছিল। ৬৫ সালে পাক- ভারত যুদ্ধের পর পাকিস্তান সরকার আরও কয়েকটি রেল লাইনের সাথে এটিও বন্ধ করে দেয়। ভারতীয় এলাকার উপর দিয় বাংলাদেশ-নেপাল সরাসরি পণ্যবাহী ট্রাক ও যানবাহন চলাচলের সুযোগ ছিল। ভারতও এ ব্যাবস্থা রহিত করে।
স্বাধীনতার পর বিভিন্নসময়ে বাংলাদেশ থেকে নেপাল, ভুটানে বিনাবাধায় পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কার চলাচলের অনুমতি চেয়ে আসছিল। ভারত এ ব্যাপারে বরাবর সম্মতি প্রকাশ করলেও বিষয়টি অনানুষ্ঠানিক ভাবে আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ পুনঃস্থাপন এবং এবং রেলপথে আখাউড়া থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সুবিধা প্রদানের শর্ত সাপেক্ষ করে। সরকার এতে সম্মত হলেই ভারত সরকার তাদের মাটির উপর দিয়ে নেপাল-ভুটানে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দিতে রাজী হয়। এ ব্যাপারে চার দেশের মধ্যে সম্পাদিত ‘‘বি বি আই এন’’ চুক্তি, প্রটোকল স্বাক্ষর ও তা কার্যকর করার উপর গুরুত্ব দেয় ভারত।
দীর্ঘ বিলম্বের পর গতমাসে নেপালের পার্লামেন্ট চুক্তি রেটিফাই করেছে। ভুটান এখনও করেনি। ভুটান থেকে জানানো হয়েছে, জুনের মধ্যে তারা চুক্তি রেটিফাই করবে।
ভুটানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও পরিবেশবাদীরা ‘‘বি বি আই এন’’ চুক্তির পক্ষে নন। ব্যাপকভাবে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের সুযোগ দেয়া হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত ভুটানের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে আশঙ্কায় তারা এর বিপক্ষে। ভুটান সরকার শেষ পর্যন্ত চুক্তি রেটিফাই করার কথা জানিয়েছে।
আগামী মাসে চার দেশের মধ্যে প্রটোকল স্বাক্ষর হবে। এতে সপ্তাহে কতগুলো যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করবে, এগুলোর পারমিশন কোন দেশের কোন কর্তৃপক্ষ দেবে, ট্রানজিট ভিসা প্রদান, ব্যাগেজ রুলস, বাস-ট্রাক-ব্যক্তিগত যানবাহন দুর্ঘটনা কবলিত হলে যান ও যাত্রীদের উদ্ধার, ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন মেরামত, আহত যাত্রীদের চিকিৎসা, থাকা-খাওয়া, বাস-ট্রাক চালকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে প্রাইভেট কোম্পানী ও যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করাসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহ প্রটোকলে নির্ধারণ করা হবে।
বাংলাদেশের বাংলাবন্ধ থেকে ফুলবাড়ি সীমান্ত থেকে ভারতের ২৯ কিলোমিটার এলাকার উপর দিয়ে নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা হয়ে নেপালের ভিতরে যাবে বাংলাদেশের পণ্যবাহী ট্রাক। একইভাবে নেপালের পণ্যবাহী ট্রাক মংলা, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে বিনাবাধায় চলাচলের সুযোগ পাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশের পণ্যবাহী ট্রাক দুই-তিন দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়। বাংলাদেশের ট্রাক থেকে পণ্য নামিয়ে ভারতীয় ট্রাকে উঠাতে হয়। নেপালের কাকরাভিটায় পন্য খালাশ করে নেপালী ট্রাকে উঠাতে হয় অথবা ভারতীয় ট্রাকে সরাসরি নেপালে নেয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ক্ষেপন হয়। পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যায়। সরাসরি চলাচল শুরু হলে দীর্ঘদিনের এ হয়রানিমূলক সময় ও ব্যয়বহুল ব্যবস্থার অবসান ঘটবে।
নেপাল তার আমদানী-রফতানী বাণিজ্য মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পাদন করতে অধিকতর আগ্রহী। তাদেরকে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দর ব্যবহার করতে হয়। হলদিয়া অনেক দূরবর্তী বলে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। এতে সময় লাগে বেশি, জ্বালানীও অনেক বেশি খরচ হয়। নতুন ব্যবস্থায় নেপাল-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বহুগুণে বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ সরকার নেপালের আমদানী-রফতানি পণ্য সংরক্ষণের জন্য মংলা বন্দরে প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। সরকার তাদেরকে বন্দরে সংরক্ষনাগার নির্মাণ করে দেয়ার কথাও জানিয়েছে।
অপরদিকে সরাসরি পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের সুবিধা পাওয়ায় ভারত অনেক কম খরচে ও অনেক কম সময়ে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হতে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত সড়ক ব্যবস্থা উন্নত নয়। সরু, জীর্ন সড়কে পণ্যবাহী ভারী ট্রাক চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। পণ্যবাহী ট্রাক চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহনের সুবিধা পাবে ভারত।