দর্শনার্থীদের ব্যাপক আগ্রহের মধ্য দিয়ে ইতালির ভেনিস নগরীতে ৫৯তম আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনীতে (লা বিএনালে দি ভেনেযিয়া)বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেন ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান।
আগামী ছয়মাস-ব্যাপী এই চিত্র প্রদর্শনী চলমান থাকবে যেটিকে চিত্রকলা বিষয়ে সারা বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পীগণ এই আসরে তাদের চিত্রকর্মসমূহ প্রদর্শন করে থাকেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও সফরকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সমন্বয়ক সাবিহা পারভীন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের কমিশনার লিয়াকত আলী লাকী, মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এম জে এইচ জাবেদ, বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের কিউরেটর ভিভিয়ানা ভানুচি, চিত্র সমালোচক ও বিশ্লেষক অধ্যাপক মইনুদ্দিন খালিদ, বাংলাদেশ ও ইতালির অংশগ্রহণকারী শিল্পীগণ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ এবং বাংলাদেশ ও ইতালির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিত্রানুরাগী।
উদ্বোধনী বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত আহসান বলেন যে, চিত্রকর্মের রয়েছে একটি সার্বজনীন আবেদন যা দেশকালের সীমা ছাপিয়ে যায়। আর এটি বিশ্ব নাগরিকদের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় করতে জোরালো ভূমিকা রাখে।
তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশ-ইতালির কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে ভেনিসে চলমান এই চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তিনি বলেন যে, বিশ্বমানের শিল্প এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক বাংলাদেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে সর্বক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে।
অতিরিক্ত সচিব সাবিহা পারভীন বলেন যে, শিল্প- সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের চিরন্তন ঐতিহ্য রয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার এই ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চায়। তিনি আরও বলেন যে, শিল্প-সংস্কৃতির প্রসার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিপূরক।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বাংলাদেশি চিত্রকরদের প্রতিভা, অংগীকার এবং দেশপ্রেমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ প্রতি দুই বছর পরপর এশিয়ান আর্ট বিএনালের আয়োজন করে যেখানে সারা বিশ্বের শতাধিক দেশ অংশগ্রহণ করে থাকে।
মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এম জে এইচ জাবেদ গত শতাব্দীর মধ্যভাগের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন যে, তারা সৃষ্টিশীল চিত্রকর্মকে সারা বিশ্বে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন।
তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক নীতির উদ্দেশ্য, যথা টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি দুটোই এ ধরনের চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে সারা বিশ্বের শিল্প সমঝদারদের মধ্যে সুচারুভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায়। শিল্প সমালোচক ও বিশ্লেষক মইনুদ্দীন খালিদ চলমান বাংলাদেশের মূল প্রতিপাদ্য “Time: Mask and Unmask” এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উপস্থিত সকলের মাঝে তুলে ধরেন।
কিউরেটর ভিভিয়ানা ভানুচি বলেন যে, বাংলাদেশি চিত্রকরগণ তাদের চিত্রকর্মের মাধ্যমে ইতালিয়ান শিল্প বোদ্ধাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। গত তিন বছরের মতো এবারও প্রদর্শনীটি সফল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত অতিথিগণ প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন। বিশ্বের ৮০ টি দেশের অংশগ্রহণে জাঁকজমকপূর্ণ এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশি খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী মোহাম্মদ ইউনুস, জামালউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ ইকবাল, হারুন-আর-রশীদ, সুমন ওয়াহিদ প্রমীতি হাসান এর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। অন্যদিকে, ইতালিয়ান চিত্রশিল্পী মার্কো কাসারা, ফ্রাংকো মারোক্কো এবং জোসেপ্পে দিয়েগো স্পিনেলী এর কিছু শিল্পকর্ম বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে স্থান পায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে একটি ককটেল রিসেপশানের আয়োজন করা হয়।