খেলাপি ঋণ: রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ

কেএমএ হাসনাত: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বেশি পরিমাণ খেলাপি ঋণসহ আর্থিকখাতে বিরাজমান পাঁচটি সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরা হয়েছে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ)। এগুলো হচ্ছে- ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত বৃহৎ জনগোষ্ঠী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অনুন্নত গ্রাহকসেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা, বীমা সম্পর্কে জনগণের আস্থাহীনতা, পুঁজিবাজারে লেনদেন-পরবর্তী ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্টে দেরি হওয়া এবং প্রশিক্ষিত বিনিয়োগকারীর অভাব।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে তিনটি ভিন্ন পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। দু’টি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং অন্য একটি ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পরিসংখ্যান। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দুটি পরিসংখ্যানের একটির সঙ্গে অন্যটির পার্থক্য ৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো নিজস্ব পরিসংখ্যানে খেলাপি ঋণের পরিমান ৪৮ হাজার ১৬৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দেখানো হয়েছে ৪৫ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক সভায় গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছে ৪৮ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর নিজস্ব প্রাক্কলন অনুযায়ী, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ১৬৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর আগের অর্থাৎ ২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিলো ৪৩ হাজার ৩৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

খেলাপি ঋণের স্থিতি নিয়ে ভিন্ন পরিসংখ্যানের বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো এ বিষয়ে যে তথ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠায় মূলত সেটিই তুলে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে দু’টি ভিন্ন পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে কেন, তা খতিয়ে না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়।

সূত্রটি জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে ঋণ শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে পাঁচ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সাত বছর ধরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) আওতায় ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কিন্তু তা সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ সন্তোষজনক পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

ব্যাংকগুলোর নিজস্ব প্রাক্কলন অনুযায়ী, গত জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা (২০২১ সালের জুন শেষে ছিলো ১০ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা)। জনতা ব্যাংকের ১২ হাজার কোটি টাকা (গত বছর ছিল ১৪,৪৩৪.১৫ কোটি টাকা)। অগ্রণী ব্যাংকের ৯ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা (গত বছর ছিলো পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা)। রূপালী ব্যাংকের পাঁচ হাজার ৭৭১ কোটি ১৬ লাখ টাকা (গত বছর ছিলো ৩,৮৬৪.৫৬ কোটি টাকা)। বেসিক ব্যাংকের সাত হাজার ৭২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা (গত বছর ছিলো ৭,৯৮৫.৫২ কোটি টাকা) এবং বিডিবিএলের ৭২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা (গত বছর ছিলো ৬৫৯.৩৪ কোটি টাকা) উল্লেখ করা হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সম্পাদিত এপিএর আওতায় চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দুই হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর নিজ নিজ প্রাক্কলন অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এপিএতে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রার পার্থক্য এক হাজার ২০০ কোটি টাকা।

Print Friendly

Related Posts