বিডি মেট্রোনিউজ॥ বাংলাদেশ থেকে মাটি রফতানি করা হবে। সিঙ্গাপুর সরকার বাংলাদেশ থেকে মাটি নেয়ার জন্য আট বছর যাবতই চেষ্টা করছে। সরকারি পর্যায়ে দু’দফা বৈঠকও হয়েছে। সরকার এতদিন সায় না দিলেও এখনও তাদের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়েছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় ইনফাস্ট্রাকচার ড্রেজিং লিমিটেড নামক স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে মাটি রফতানির প্রস্তাব দিয়েছে। সিঙ্গাপুরের গভীর সমুদ্র বন্দর সম্প্রসারণে বিপুল পরিমাণ মাটি প্রয়োজন। মাটি নিয়ে সাগরের নির্দিষ্ট এলাকা ভরাট করা হবে।
সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ থেকে জানান হয়েছে যে, বাংলাদেশ যত পরিমাণ মাটি দেবে তারা তাই নেবে। তারা বাংলাদেশ থেকেই ২০ লক্ষ টনের বেশি মাটি, বালি নেবে। ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান থেকেও তারা মাটি, বালি সংগ্রহের চেষ্টা করছে। মালয়েশিয়া, ভারতের কাছ থেকে সাড়া পায়নি।
সিঙ্গাপুর দামের লোভনীয় অফার দিয়েছে। প্রতি টন মাটি, বালির দাম ১ শ ডলার দেয়ার প্রস্তাব করেছে। দাম আলোচনা সাপেক্ষ বলেও তারা উল্লেখ করেছে। কাদা মিশ্রিত ছাড়া শক্ত মাটি হলে দাম বেশি দিতে তাদের আপত্তি নেই। কাদা মাটির ক্ষেত্রে দাম কম হবে জানিয়ে বলেছে মাটির প্রকৃতি দেখে আলোচনার মাধ্যমে তা স্থির করা হবে। মাটি, বালি রফতানি করে বাংলাদেশের আট থেকে দশ হাজার কোটি টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হলেও এর মারাত্মক ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। ক্ষতিকর দিক নিয়েই চিন্তিত সরকার। ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের প্রস্তাব শর্ত সাপেক্ষে বিবেচনার কথা বলেছে। ভূমি মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় স্থলভাগ থেকে মাটি কাটার বিরোধিতা করে। নদী খনন থেকে প্রাপ্ত মাটি, বালি রফতানির কথা বলেছে। নদী ভাঙন কবলিত ও ভাঙন প্রবণএলাকাগুলো থেকে মাটি, বালি সংগ্রহের বিপক্ষে জোরালো মত দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ও ভাঙন প্রবণ এলাকা থেকে মাটি নেয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছে। তারা বলেছে, নদ-নদীগুলোতে খনন কাজের সময় যে কাদামাটি বেরিয়ে আসে একমাত্র তা রফতানি করা যেতে পারে। এতে দেশের নদীপথগুলোও নাব্যতা ফিরে পাবে। স্থানীয়ভাবে ড্রেজার সঙ্কট থাকায় সিঙ্গাপুরকে যথেষ্ট সংখ্যক ড্রেজার সরবরাহ করতে হবে।
খনন করা মাটি নদীর পাড়ে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে তা রফতানির কথা বলা হয়েছে। ভাঙন প্রবণ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় ড্রেজিং না করে তাদের নির্ধারিত এলাকা ও রুট থেকে ড্রেজিং করার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হবে। বাণিজ্যিক স্বার্থে রফতানিকারক কোম্পানি তাদের ইচ্ছা মাফিক যে কোন স্থানে খনন করে মাটি তুলতে পারবে না।
বিগত জোট সরকারের সময় নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকাসমূহ থেকে অবাধে মাটি, বালি উত্তোলন করা হয়। এতে নদীর তীরবর্তী এলাকাসমূহ ঘরবাড়ি হুমকির মধ্যে পড়ে। বর্তমান সরকারের সময়ও এ অবস্থা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকার দলীয় প্রভাবশালী লোকজন বছরের পর বছর এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।