কে ‍এই মি. রহমান?

এ খান  ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা ও তাদের গোয়েন্দা  সংস্থা মোসাদ এর প্রতিনিধি মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বৈঠক আগেও হয়েছে। এ বৈঠক হয় লন্ডনে এবং ব্যাংককে। লন্ডনের বৈঠকে বিএনপির অন্যতম শীর্ষনেতা তারেক রহমান উপস্থিত ছিলেন কিনা জানার জন্য বহু চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

আসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে বের করতে চাচ্ছেন লন্ডনে সাফাদির সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক হয়েছে কিনা। বাংলাদেশে বিএনপির কোন কোন নেতার সাথে আসলাম চৌধুরীর ইসরাইলী নেতার সাথে যোগাযোগ সর্ম্পকের  ব্যাপারে আলাপ হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদের কাছে মুখ খুলতে শুরু করেছেন আসলাম চৌধুরী। তবে তারেক রহমানের সাথে মেন্দির বৈঠক সর্ম্পকে মুখ খুলছেন না।

মেন্দি সাফাদি লন্ডনে মি. রহমানের সাথে আলাপের কথা উল্লেখ করেছেন। কে এই মি. রহমান, এই রহমানই তারেক রহমান ধারনা করে নানাভাবে আসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়েছে, সাফাদির সাথে ভারতে আসলামের বৈঠক ছিল পূর্ব নির্ধারিত। আসলাম চৌধুরী দাবি করেছেন, বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিল বাণিজ্যিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ, নৈরাজ্য সৃষ্টি, নিরাপত্তা সংশ্লিট কোন  আলোচনা  হয়নি।

ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহায়তায় বাংলাদেশে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটানোর কোন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেন আসলাম চৌধুরী।

বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করছেন  বিএনপির ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে সরকারি মহল পরিকল্পিতভাবে আসলাম চৌধুরীকে দিয়ে নানাকথা বলাচ্ছে। বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা তারেক রহমানকেও জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে একই উদ্দেশ্যে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন আসলাম চৌধুরীর বিগত কার্যক্রম পর্যালোচনায় তার মাধ্যমে দেশে গোলযোগ, অস্থিরতা সৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর চট্টগ্রাম  অঞ্চলে সন্ত্রাস, পেট্রোল বোমাবাজি, নিরীহ মানুষের হত্যাকান্ড ঘটাতে আসলাম চৌধুরীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। তার বিরুদ্ধে ১৮টির মতো সহিংস ঘটনায় জড়িত থাকা, অর্থায়নসহ নানাভাবে ইন্ধন দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা রয়েছে। সরকারকে নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলতে  নতুন করে সহিংস কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করা তার পক্ষে অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে তারা মনে করেন।

একক সিদ্ধান্তে তিনি কিছু করেননি। এর পিছনে বিএনপির কোন কোন নেতা জড়িত আছেন তাদের নাম উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপির নেতাদের দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে  বিএনপির কোন কোন নেতাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিএনপি এড়িয়ে গেলেও ইসরাইলী নেতার সাথে বিএনপি নেতার বৈঠকই বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য যথেষ্ট। এই ঘটনা দেশের মানুষের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ইসলামী দলগুলোসহ অন্যদের মধ্যেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোটসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন এরিমধ্যে বিএনপির সঙ্গ ছেড়েছে। ২০ দলভুক্ত অপর ইসলামী দলগুলোও ভিন্ন অবস্থান নেয়ার কথা ভাবছে। ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধির সাথে বৈঠকের খবর সত্য প্রমানিত হলে তারা আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে তারা বেরিয়েও যেতে পারেন।

আসলাম চৌধুরীর সাথে ইসরাইলী নেতার বৈঠক প্যালেস্টইন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে যেমনি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে, প্রতিবেশি ভারতও তা হাল্কা করে নেয়নি।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তার বিষয়টিই ভারতের কাছে প্রধান ভাবনার। পশ্চিমবঙ্গে সংঘটিত কয়েকটি বোমা বিস্ফোরন, জঙ্গী তৎপরতার ঘটনা তাদেরকে বিচলিত করে রেখেছে। পূর্বাপর ঘটনা পর্যালোচনায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ভারতে ধর্মীয় উগ্রবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতার ব্যাপারে বিএনপির কোন অংশ, জামায়েতের সম্পৃক্ততার সম্ভাবনাকে তারা বিবেচনায় রেখেছে।

অপরদিকে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত কঠোর অবস্থান ভারতকে আশ্বস্ত রেখেছে। জঙ্গী দমনে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে। পাশাপাশি বিএনপির প্রতি আস্থার ঘাটতির মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে।

এদিকে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়া হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থেকে সায় পাওয়ার পরই মামলা দায়েরর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts