বিডি মেট্রোনিউজ॥ ‘আমরা পারব’- নিজের এই স্লোগানে সবাইকে কণ্ঠ মেলানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বকে নারীর জন্য নিরাপদ করতে এবং সমতা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনেতাদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান এই নেত্রী। সমাজ ও রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে নারী-পুরুষের সমতা আনতে সব বাধা দূর করারও অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার বুলগেরিয়ার সোফিয়ায় গ্লোবাল উইমেন লিডারস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি এ অঙ্গীকার করেন।
ইউরোপ সফরে লন্ডন থেকে সোফিয়া গিয়ে বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লিভনিলিয়েভের সঙ্গে বৈঠকের পর ফোরামের অনুষ্ঠানে যান তিনি। সম্মেলনস্থলে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ইউনেস্কার মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা এবং কাউন্সিলর অফ উইমেন ইন বিজনেস-এর চেয়ারপারসন বোরিয়ানা মানোলোভা।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ইরিনা বোকোভার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লিভনিলিয়েভও বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে তার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, “নারী ও পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় যত প্রতিবন্ধকতা আছে, সব দূর করার অঙ্গীকার রয়েছে আমার।”
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশই সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও স্পিকার নারী।
বাংলাদেশের বর্তমান সংসদে ৭০ জন নারী সদস্যের উপস্থিতির কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ সংখ্যা মোট সংসদ সদস্যের ২০ শতাংশ।
২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩০ শতাংশ নারী সদস্য থাকার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপের বিষয়টিও বৈশ্বিক এই সম্মেলনে তুলে ধরেন তিনি।
এছাড়া স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন, তৃণমূলে ইউনিয়ন পরিষদে নারীদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের কথাও বলেন তিনি।
নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে, প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৭২ লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি পাচ্ছে।
এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষক এবং দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য বিনামূল্যে খাবার চালুও শিক্ষায় লৈঙ্গিক সমতা আনতে ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মায়ের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশজুড়ে হাসপাতালের পাশাপাশি সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া সন্তান প্রসব নিরাপদ এবং মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সেবায় মাতৃ স্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম চালু করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে নারীর ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে, যেখানকার প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিকের ৮৫ শতাংশই নারী।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, কূটনীতি, জঙ্গি বিমান পরিচালনা ও শীর্ষ উদ্যোক্তাদের মধ্যেও রয়েছেন নারী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তারা।
“এভাবে বাংলাদেশে নারীরা সত্যিকার অর্থে বাধা ভাঙছে এবং জাতি গঠনে এখন সক্রিয় উন্নয়ন নিয়ামকে পরিণত হয়েছে।”
বাংলাদেশ সরকারের এসব পদক্ষেপের স্বীকৃতি হিসেবে ইউনোস্কোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে যে ‘শান্তিবৃক্ষ’ পদক দেওয়া হয়েছিল তা বিশ্বের নিপীড়িত নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেন শেখ হাসিনা।
অনেক অর্জন সত্ত্বেও এখনও নারীর প্রতি সহিংসতা, বাল্য বিয়ে এবং নারী ও মেয়ে শিশু পাচার প্রতিরোধে পুরোপুরি সফলতা আসেনি বলে স্বীকার করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
এ ধরনের অপরাধের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ‘বিপুল’ পরিমাণ বিনিয়োগের উপর গুরুত্ব দেন তিনি।
নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ, তাদের যথাযথ শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন এবং সামাজিক পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে গড়ে তুলতে ক্ষমতায়নের জন্য যেসব চ্যালেঞ্জ তা মোকাবেলায় একযোগে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।