৬ জনকে ধরিয়ে দিতে ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা

বিডি মেট্রোনিউজ ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক এবং প্রকাশক হত্যায় জড়িত সন্দেহে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি)’ ছয় সদস্যকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারা হলেন—এবিটির অন্যতম সংগঠক শরীফ ও সেলিম এবং সদস্য সিফাত, রাজু, সিহাব ও সাজ্জাদ।

ওই ছয় ‘জঙ্গির’ ছবিসহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডিএমপির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সঠিক নাম-ঠিকানা পরিচয়সহ তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তথ্যদাতাকে পুরস্কার দেয়া হবে। এজন্য সর্বসাধারণের সহযোগিতাও কামনা করা হয়।

এতে বলা হয়, এবিটির শীর্ষ সারির দুই সংগঠক শরিফুল ওরফে সাকিব ও সেলিম ওরফে ইকবালকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে এবং সদস্য সিফাত ওরফে সামির, আঃ সামাদ ওরফে সুজন, শিহাব ওরফে সুমন এবং সাজ্জাদ ওরফে সজিবের জন্য দুই লাখ টাকা করে পুরস্কার দেয়া হবে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বিষয়ে তথ্য দেয়ার জন্য ০১৭১৩৩৭৩১৯৪, ০১৭১৩৩৭৩১৯৮, ০১৭১৩৩৭৩২০৬ এবং ০২-৯৩৬২৬৪০ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। এছাড়া dcdbsouth@police.gov.bd.com-এ ঠিকানায় ইমেইলও পাঠানো যাবে।

তথ্যদাতার নাম ও পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ডিএমপি।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছয়জনের একজন শরিফুলের বাড়ি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে। এছাড়াও সাকিব, শরিফ, সালেহ, আরিফ এবং হাদি নামেও তিনি পরিচিত। এবিটি সদস্যদের সামরিক ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়াও কোনো হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী সদস্য নির্বাচনের দায়িত্বও শরিফুল পালন করতেন।

শরিফূল সম্পর্কে ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে তার উপস্থিতি ধরা পড়েছে। অভিজিৎ ছাড়াও রাজধানীর গোড়ানে নীলাদ্রি নীলয়, সাভারে শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যা এবং লালমাটিয়ার প্রকাশক আহম্মেদ রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টায় শরিফুল নিজে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেয়। এছাড়া জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা, তেজগাঁও এ ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা এবং গত দুই মাসে রাজধানীর সূত্রাপুরে নাজিমউদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবেও শরিফুলের নাম এসেছে। তার তথ্যদাতার জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ডিএমপি।

সেলিম সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রকাশক দীপন, ওয়াশিকুর বাবু, নীলাদ্রি নীলয় এবং মিরপুরের স্কুলশিক্ষক হত্যার ঘটনায় সরাসরি উপস্থিতি ও নেতৃত্ব দেওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। সেলিম ছাড়াও সে ইকবাল, মামুন ও হাদি-২ নামে পরিচিত। শরিফুলের মতো অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী বলেএ তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেলিমের উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, গায়ের রং শ্যামলা এবং তিনি চশমা পরেন। তথ্যদাতার জন্য পুরস্কার পাঁচ লাখ টাকা।

তথ্যের জন্য দুই লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া সিফাত সম্পর্কে পুলিশ বলছে, সিলেট অঞ্চলের ছেলে সিফাত সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যতম সদস্য। সে প্রকাশক দীপন হত্যাকাণ্ডের সার্বিক সমন্বয়কারী ছিল এবং ওই হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেছে। সাভারে শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি অংশগ্রহণে ব্যাপারেও তথ্য রয়েছে। সিফাত ছাড়াও সামির ও ইমরান নামে পরিচিত।

পুলিশ জানিয়েছে, এবিটির সামরিক শাখার অন্যতম সদস্য কুমিল্লার আবদুস সামাদ পরিচিত সুজন, রাজু, সালমান ও সাদ নামেও। প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টায় তিনি সার্বিক সমন্বয়কারী ও অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালনসহ সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি সংগঠনের সদস্যদের ‘জিহাদে’ উদ্বুদ্ধ করার বিষয়ে ধর্মীয় আলোচনা বা বয়ান দিয়ে থাকেন। তথ্যদাতার জন্য পুরস্কার দুই লাখ টাকা।

ডিএমপি বলছে, শিহাবও এবিটির সামরিক শাখার সদস্য। চট্টগ্রামের ছেলে শিহাব এছাড়া সুমন ও সাইফুল নামে পরিচিত। প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টায় সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়াও বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তার তথ্যদাতার জন্যও পুরস্কার দুই লাখ টাকা।

এছাড়া সাজ্জাদ নামে এক ব্যক্তির ছবিও প্রকাশ করেছে ডিএমপি। সজীব, সিয়াম ও শামস নামেও পরিচিত এই ব্যক্তি অভিজিৎ রায় ও নীলাদ্রি নীল হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার তথ্যদাতাদের জন্য দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts