ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রতিষ্ঠার এক যুগ

বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। দেশের শিল্প খাতের অব্যাহত নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে শিল্পাঞ্চল বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ।

দেশের প্রচলিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সব সময় সম্ভব হয় না। বরং শিল্প-প্রতিষ্ঠান, মালিক-শ্রমিক এবং উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ নিরাপত্তার জন্য বিশেষায়িত ও পেশাদার পুলিশের অভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে মালিক-শ্রমিক এবং দেশ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি ক্ষুণ্ন হয় দেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি। সামগ্রিক মূল্যায়নে সর্বমহলে দাবি ওঠে বিশেষায়িত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠনের। প্রধানমন্ত্রী এ দাবির যৌক্তিকতা এবং গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠনের ঘোষণা দেন।

উদ্বোধনের পর থেকেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্প এলাকায় শিল্প-প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন হওয়ার পর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১, ঢাকার আওতাধীন সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানা শিল্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন এবং শিল্পবান্ধব কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে নিবিড় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। একজন পরিচালক (এসপি), একজন উপ-পরিচালক (অতিঃ পুলিশ সুপার), পাঁচজন সহকারী পরিচালক (এএসপি)সহ সর্বমোট ৬৭৩ জন জনবল নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১ এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

জানা গেছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১, ঢাকা তার কার্যক্রম নির্দিষ্ট ও গতিশীল করার জন্য আওতাধীন শিল্প এলাকাকে পাঁচটি সেক্টরে বিভক্ত করে গোয়েন্দা ও অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অত্র ইউনিটের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের প্রতিটি সদস্য অত্র ইউনিটের আওতাধীন ডিইপিজেড এলাকা, অন্যান্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক আবাসিক এলাকা, শ্রমিক অসন্তোষের উদ্ভব হয় এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনকে নিবিড় গোয়েন্দা নজরদারিতে রেখেছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদনমুখী কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে অংশীদারিত্বমূলক পুলিশিং ব্যবস্থা প্রচলনের লক্ষ্যে এই ইউনিট নিয়মিত কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং এবং ওপেন হাউস ডে সহ নানাবিদ কর্মকান্ডের মাধ্যমে শ্রমিক, মালিক ও অংশীজনদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে শিল্পাঞ্চলে উৎপাদনমুখী ও স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বাংলাদেশ পুলিশকে সাইবার ক্রাইম, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন, মানি লন্ডারিং ইত্যাদি সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম একটি জনবান্ধব আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সব ধরণের সময়োপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসাবে গত সাড়ে ১৩ বছরে পুলিশ বাহিনীতে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, সাইবার ইউনিট গঠনসহ ৬টি বিশেষায়িত ইউনিট, ৪টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ৩টি র‌্যাব ব্যাটালিয়ন, ২টি রেঞ্জ, ২টি মেট্রোপলিটন পুলিশ, ৬৩টি থানা, ৯৫টি তদন্ত কেন্দ্র এবং ৩০টি ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার গঠন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘শিল্পাঞ্চলে অপরাধের মাত্রা ও প্রকৃতি ভিন্নতর। শিল্পক্ষেত্রে বিশেষ করে পোশাক শিল্পে নৈরাজ্য ও অস্থিরতা দেখে আওয়ায়ামী লীগ সরকারই প্রথম শিল্প পুলিশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ২০০৯ সালে শিল্প পুলিশ গঠনের ঘোষণা দেয়। ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর হতে শিল্পাঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য এই ইউনিটটি যাত্রা শুরু করে। গঠনের পর থেকেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ অত্যন্ত সফলতার সাথে তাদের দায়িত্বপালন করে আসছে।

তিনি আশা করেন, দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সকল শিল্পক্ষেত্রে অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ আরো সচেষ্ট হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।

 

Print Friendly

Related Posts