মাইলস্টোন স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু, সাক্ষী দিতে দাঁড়িয়ে কাঁদলেন বাবা ফাইজুল

বাবা ফাইজুল ইসলাম ও সন্তান ফাইজা তাহসিনার (সূচি)

সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কাঁদলেন সন্তানহারা বাবা ফাইজুল ইসলাম। তিনি নিজের চোখের সামনে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হওয়া সন্তানের করুণ মৃত্যুর বর্ণনা দিচ্ছিলেন । সেই দৃশ্য যখন বর্ণনা করছিলেন তখন আদালত কক্ষে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।

দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম যখন সন্তান হত্যার মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন আদালত কক্ষে উপস্থিত অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।

সড়ক দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজা তাহসিনার (সূচি) নিহতের প্রায় চার বছর পর মঙ্গলবার এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো. শাকিল আহাম্মদ বাদীর সাক্ষগ্রহণ করেন।

সাক্ষ্যে ফাইজুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন আমি সন্তানকে নিয়ে বাসা থেকে স্কুলে যাচ্ছিলাম। এ সময় আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিল। বাসা থেকে বেরিয়ে রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের সন্নিকটে ১০ নম্বর ব্রিজের কাছে যাই। এ সময় হঠাৎ বেপরোয়া গতিতে আসা একটি মাইক্রোবাস আমার চোখের সামনেই মেয়েকে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সে সড়কে লুটিয়ে পড়ে। তখন গাড়িটি না থামিয়ে চালক তাকে চাপা দেয়।

তিনি বলেন, চালক বেপরোয়া গতিতে মাইক্রোবাসটি না চালালে আমার আদরের মেয়েকে এভাবে আমাদের সামনে করুণ পরিণতি বরণ করতে হতো না। যতদিন বেঁচে থাকব সন্তানের এই মৃত্যুর দৃশ্য কখনই ভুলে থাকা সম্ভব নয়। আমার মত আর কোন বাবা-মাকে যেন এভাবে সন্তান হারাতে না হয়। আমার মেয়ের হত্যাকারী আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করছি। এছাড়া ঘাতক মাইক্রোবাসটির যাত্রীদেরও খুঁজে বের করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন বাদী। বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আগামী ৪ ডিসেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছে আদালত। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ফেরদৌস শাহনাজ ফেন্সি। এ সময় বাদীর আইনজীবী সোহাগ ফকির উপস্থিত ছিলেন।

২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি স্কুল যাওয়ার পথে উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের ১০ নম্বর ব্রিজের কাছে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় নিহত হন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজা তাহসিনা (সূচি)। এ ঘটনায় ওইদিন তুরাগ থানায় মামলা করেন তার পিতা ফাইজুল ইসলাম। পরে তদন্ত করে পুলিশ মাইক্রোবাসের চালক ফারুক মোল্লাকে আসামি করে দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এই মামলার বিচার চলাকালে আসামি হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

Print Friendly

Related Posts