ভোলায় ২৩৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান

ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের নতুন উৎস পাওয়া গেছে। জেলার টবগী ইউনিয়নে একটি কূপ খনন করে এ গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে দেশীয় সরকারি কোম্পানি বাপেক্স এবং বিদেশি কোম্পানি গ্যাজপ্রম। টবগী-১ নামের এ কূপটি প্রায় ২৩৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে এ পরিমাণ গ্যাসের দাম প্রায় ৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীতে সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে এবং গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে গত ১৯ আগস্ট ভোলা জেলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের টবগী-১ অনুসন্ধান কূপটি প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৩ হাজার ৫২৪ মিটার গভীরতায় খননকাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়। শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র হতে ৩ দশমিক ১৭ কিলোমিটার দূরে এ কূপের অবস্থান।

শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে এর আগে ৬৪২ দশমিক ৭ বিসিএফ গ্যাসের মজুত আছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছিল। টবগী-১ কূপের ২৩৯ বিসিএফ যোগ হয়ে এ গ্যাসক্ষেত্রে মজুতের পরিমাণ দাঁড়াল ৮৮১ দশমিক ৭ বিসিএফ গ্যাস।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, কূপটিতে সম্ভাব্য গ্যাস মজুত ও উৎপাদন হার নিরূপণে গৃহীত কারিগরি পরীক্ষামূলক টেস্টিং (ডিএসটি) কার্যক্রম গত ১ নভেম্বর সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ ডিএসটি কার্যক্রমে ৩২/৬৪ ইঞ্চি চোক সাইজ ব্যবহার করে উক্ত কূপ থেকে গড়ে দৈনিক ২ কোটি ঘনফুট হারে গ্যাস ফ্লো পরীক্ষা করা হয়েছে। এটি আশাব্যঞ্জক। দৈনিক গড়ে ২ কোটি ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন বিবেচনায় কূপ হতে ৩০-৩১ বছর গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হবে। আগামী ৭ নভেম্বর নাগাদ কূপটি দ্রুত উৎপাদনক্ষম করার লক্ষ্যে কূপের অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হবে।

দেশীয় জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ২০২২-২০২৫ সময়কালের মধ্যে পেট্রোবাংলা মোট ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
ভোলায় তিনটি অনুসন্ধান গ্যাস কূপ খননের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সে প্রকল্পের অংশ টবগী-১ কূপ খনন করা হয়। আগামী জুনের মধ্যে এ প্রকল্পে আরও দুইটি কূপ (ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২) খনন করা হবে। তিনটি কূপ থেকে দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি থেকে সাড়ে ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হতে পারে। প্রতিটি কূপ খননে প্রায় ২১ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে গ্যাজপ্রম। বাজারদর অনুযায়ী এটি অপেক্ষাকৃত বেশি বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার একাধিক কর্মকর্তা।

এদিকে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের অবস্থা ভালো হবে। আমরা এখন চিন্তা করছি আগামী মার্চ নিয়ে। গত তিন মাসে লোডশেডিং করে অনেক গ্যাস সাশ্রয় হয়েছে, যার কারণে শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

এই মাস (নভেম্বর) থেকে লোডশেডিং কমা শুরু হবে। তাছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হবে না বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, দেশে এন পর্যন্ত ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। সর্বশেষ সিলেটের জকিগঞ্জে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় ২০২১ সালে। আর বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন শাহবাজপুরের টবগী-১ কূপ। ১৯৯৫ সালে এ গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলা।

Print Friendly

Related Posts