বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব লিমিটেডের সাবেক সভাপতি, সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক, বংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক, বাপা’র সহ সভাপতি, পরিবেশকর্মী, ক্র্যাক প্ল্যাটুনের অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন।
ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজান উদ্দিন আহমেদ এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বিভিন্ন সমস্যার কারণে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। উনার মাল্টিপল অর্গান ফেইলিওর হয়েছে। প্রথমে চোখের সমস্যা নিয়ে গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর শ্যামলীর বেসরকারি স্পেশালাইজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানে তার হার্টের আগের সমস্যা আবারও দেখা দেয়। পা ভাঙার কারণেও কিছু সমস্যা ছিল। দুদিন আগে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও শেষমেশ তার মাল্টিপল অর্গান ফেইলিওর দেখা দেয়। উনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়ায় ও রেড ব্লাডসেল উৎপন্ন না হওয়ায় রক্ত দেয়া হয়। এজন্য ৩ ব্যাগ রক্তও সংগ্রহ করা হয়। আরো রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। উনার রক্তের গ্রুপ ‘এ’ পজিটিভ। রক্ত দেয়ার পরও তার শারিরীক অবনতি দেখা দেয়।
প্রথমে আইসিইউ এবং পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মিজান উদ্দিন।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের সুস্থ্যতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন তার পরিবার।
১৯৭১ সালে মোবাশ্বের হোসেন সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ছিলেন ক্র্যাক প্ল্যাটুনের সক্রিয় সদস্য। মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার গ্রুপের হয়ে তিনি বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমেরিকান এমব্যাসীর একটি লাইব্রেরি তিনি বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেন।
দেশের নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি ও একজন পরিক্ষিত বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের কোন সার্টিফিকেট নেননি।
ক্রীড়াঙ্গন ও সাংবাদিকদের আপনজন ছিলেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ও আবাহনী লিমিটেডের সাবেক অধিনায়ক মোনেম মুন্নাকে নিয়ে আমার সম্পাদিত ‘কিং ব্যাক মোনেম মুন্না’ বইটি প্রকাশে উৎসাহিত করেছিলেন মোবাশ্বের ভাই।
ক্রীড়াঙ্গনের নিবেদিত প্রাণ মোবাশ্বের ভাই ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সভাপতি ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হিসেবেও ক্রিকেটের মানোন্নয়নে কাজ করেন। সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক হয়েও ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান রাখেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভোক্তা অধিকারে তিনি নিজ খরচে বেশ কিছু মামলা পরিচালনা করে জনগনের পাশে থাকেন।
পরিবেশের বিপর্যয় রোধে যে কোন আন্দোলনে সবসময়ই তিনি ছিলেন সামনের কাতারে। রাজধানীতে খেলার মাঠ রক্ষার আন্দোলনে তিনি সবসময়ই ছিলেন সোচ্চার।অবহেলিত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে কলেজ গেটে মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান সংস্কার করে দেন। এসময় তাকে সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, জাভেদ ওমর বেলিম গোল্লা, মোহাম্মদ আশরাফুল, রাজিন সালেহ, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ সহ জাতীয় ক্রিকেট দলের তৎকালীন সদস্যরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের কৃতিপুরুষ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ঢাকায় ধানমন্ডি ক্লাবের সামনেই নিজের ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। নীড় লিমিটেড নামে তার একটি আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সূত্র: কাজী ইমরুল কবির সুমন