বাঙলার মুসলিম নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বরে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ।
এই মহীয়সী নারীর স্মৃতিবিজড়িত জন্মস্থান আজও পড়ে আছে অবহেলায়। উদ্যোগের অভাবে এখানে রোকেয়া চর্চা ও পর্যটন কেন্দ্রের দ্বারও রুদ্ধ। বেগম রোকেয়া দিবস এলেই কোলকাতা থেকে তার মরদেহ আনার দাবিসহ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্থায়ীভাবে স্মৃতি ও গবেষণা কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি তোলেন পায়রাবন্দের বাসিন্দারা। এবার এ দাবির সাথে যুক্ত হয়েছে রোকেয়ার সঠিক ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে আবশ্যক করা।
রোকেয়া স্মৃতি সংসদের গবেষকরা বলছেন, রোকেয়া উপ-মহাদেশের নারী সমাজকে কু-সংস্কারের দেওয়াল ছেদ করতে শিখিয়েছেন। তিনি গৃহবন্দী নারীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আলোর মশাল। সেই মহীয়সী নারীর স্মৃতিবিজড়িত জন্মস্থান আজও অন্ধকারে। অবহেলা আর উদ্যোগহীনতার কারণে এখানে রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র ও পর্যটন এবং গবেষনা কেন্দ্রের দ্বার এখনও অনেকটা রুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ মিঠাপুকুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, নারী বৈষম্য দূর করতে রোকেয়ার দর্শন সমাজের সব জায়গায় তুলে ধরা দরকার। দর্শনার্থীদের জন্য রোকেয়া স্মৃতি বিজড়িত জন্মস্থানকে আরও আধুনিকায়ন করা এখন সময়ের দাবি।
রফিকুল ইসলাম দুলাল আক্ষেপ করে বলেন, রোকেয়া নিজেই বেগম লেখার বিরুদ্ধে ছিলেন, অথচ তার মৃত্যুর পর ১৯৩৬ সালের দিকে রোকেয়ার জীবনী লিখতে গিয়ে সৈয়দ সামছুন্নাহার মাহমুদ নামের এক লেখক সেখানে প্রথম বেগম শব্দটি ব্যবহার করেন। এর পর থেকে ক্রমে ক্রমে রোকেয়ার নামের আগে বেগমের ঘোমটা যুক্ত হয়েছে যা রোকেয়ার লেখার কোন চিঠিপত্রে সেটির প্রমাণ আমরা পাইনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে মহীয়সী এই নারীর জীবনী উপর লেখা একটি অধ্যায়ে তার জন্ম-মৃত্যু এবং বিয়ের সালসহ পৈত্রিক সম্পত্তির উপর নির্মিত বাড়ি নিয়েও রয়েছে তথ্যগত ভুল। এসব ভুল সংশোধনসহ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রোকেয়ার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে তিনি বাংলা একাডেমির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আবু সালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান বলেন , রোকেয়া সাখাওয়াত শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নয় বরং বৈশ্বিক সম্পদ। তার কর্মের সুফল আজ আমরা পেতে শুরু করেছি। রোকেয়ার নামের আগে বেগম লেখাটি তার ইতিহাসেও পাওয়া যায়নি। তাই পাঠ্যপুস্তকসহ সর্বাঙ্গনে রোকেয়ার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার দাবি করেন তিনি।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, রোকেয়া সাখাওয়াত শুধু মিঠাপুকুর বা পায়রাবন্দের নয়, তিনি সারা বাংলাদেশের। তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূত ছিলেন। তার যে বাস্তভিটা এবং সম্পত্তি তা নিয়ে দুটি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া ভারতের সোদপুরে থাকা বেগম রোকেয়ার কবরটি বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও কথাবার্তা হচ্ছে। এটি দুটি রাষ্ট্রের সরকার পক্ষের কূটনৈতিক বিষয় বলেও জানান তিনি।’
করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে এবার রোকেয়া দিবস পালনে তার জন্মস্থান পায়রাবন্দে ৩ দিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করেছেন কর্তৃপক্ষ।