মো. মেহেদী হাসান: লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রপুর থানার আব্দুল কাদের সাফায়েত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এলাকায় কোনো দলের সঙ্গেই রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না।
ভর্তির ৭ মাস পরই পেয়ে যান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য পদ। এর এক মাস পরই শাখা ছাত্রলীগের ব্যবস্থাপনা বিভাগ ইউনিটের ১ নং সাংগঠনিক সম্পাদক। একই ছাত্র ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের নেতা কিভাবে এ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন! প্রশ্ন উঠেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ কিভাবে যাছাই বাছাই ছাড়া এটা করতে পারে।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের অনুমোদনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আব্দুল কাদের সাফায়েতকে সদস্য পদ দেওয়া হয়। এরপর চলতি মাসের ৩ ডিসেম্বর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্যবস্থাপনা বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের ১নং সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।
বিতর্কের ঝড় উঠার পূর্বেই শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য আব্দুল কাদের সাফায়েতকে বহিস্কার করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করায় ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকায় ব্যবস্থাপনা বিভাগ শাখা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাদের সাফায়েতকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হলো।
কথিত আছে, সাফায়েত শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজীর অনুসারী ছিলেন।
এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজি বলেন, আদর্শ পরিপন্থী কার্যক্রমে যুক্ত থাকায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংগঠন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সে ছাত্রদলের সাথে যুক্ত প্রমাণ পেয়েছি, তাই তাকে আমরা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করেছি। তার মোবাইলে ছাত্রদল সম্পর্কিত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই আমরা সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেই।
যাচাই-বাছাই ছাড়াই পদ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবকিছু যাচাই বাছাই করে কমিটি দিয়েছি। আমরা তো মানুষ, ফেরেশতা না। তারপরেও যদি এরকম কোনো অনুপ্রবেশকারী থেকে থাকে তবে সাথে সাথেই আমরা ব্যবস্থা নেব।
সাফায়েত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম এর কোটায় ছাত্রদলের সদস্য পদ পায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের পদবঞ্চিত এককর্মী জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাদের মোটরসাইকেলের চালক, অছাত্র, বহিরাগত লোকদের দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলে পদায়ন করেন।
এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, আব্দুল কাদের সাফায়েত আমাদের কমিটির সদস্য। ছাত্রলীগের কমিটিতেও ওর নাম এসেছে। ছাত্রলীগ ওকে বহিষ্কার করেছে কি না জানিনা। আমাকে ফোন দিয়েছিলো সে। আমি বকাবকি করেছি তাকে। সে আমাকে বলেছে সে ছাত্রদলের আদর্শ পছন্দ করে, সে ছাত্রদলই করবে, তাকে জোর করে পোস্টেড করেছে ছাত্রলীগ।
এদিকে সাফায়েত বলেন, এক বড় ভাই আমার নাম ছাত্রদলে দিয়ে দিয়েছে। আর আমার বন্ধুদের সাথে রাজনীতি করি বলে ছাত্রলীগে আমার নাম এসেছে। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতিই করতে চাই।
তিনি জানান, আমার গ্রামের একজন ভাই আছে, তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি আমাকে মাঝে মধ্যে ফোন দিতেন, চা খাওয়ার জন্য ডাকতেন। এক পর্যায়ে সিভি দিতে বললে আমি সিভি দিয়ে দিই। তারপরে দেখি যে আমাকে শাখা ছাত্রদলের সদস্য পদ দিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমি সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম ভাইয়ের রাজনীতি করি। আমি আজকেই ছাত্রদল থেকে অব্যাহতি নিতাম, কিন্তু তার আগেই আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সাফায়েত কার রাজনীতি করতো বা কিভাবে পদ পেলো এমন প্রশ্নে ব্যবস্থাপনা বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাদি হাসান সিজান বলেন, আমি আসলে জানি না সে কিভাবে পদ পেয়েছে।