বিজিবি পুনর্গঠনের একযুগ পূর্ণ

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২২ পালিত হচ্ছে আজ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বীরত্ব ও ঐতিহ্যের গৌরবমন্ডিত এক সুশৃঙ্খল আধা-সামরিক বাহিনী।

এ বাহিনী বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী ও শিশু এবং মাদক পাচার প্রতিরোধসহ অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

এর প্রধান কার্যালয় ঢাকার পিলখানায় অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে এর নাম ছিল ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্‌স (ইপিআর)। পরে নাম হয় বাংলাদেশ রাইফেল্‌স (বিডিআর)। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বাহিনীর সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হয়। মর্মান্তিক ঐ ঘটনার পর বাহিনী পুনর্গঠনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মহান জাতীয় সংসদে ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০ পাশ হয়ে ২০ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ জানুয়ারি-২০১১ বাহিনীর সদর দপ্তরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর নতুন পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন এবং মনোগ্রাম উন্মোচনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় এবাহিনীর নতুন পথচলা।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্বপালনের জন্য বিজিবি’র সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

বাণীতে প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন ইপিআর-এর বাঙালি সদস্যবৃন্দ পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ইপিআর-এর বেতার কর্মীরা পিলখানা থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসযোগে প্রচার করায় ইপিআর-এর সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তিন জনকে পাকিন্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য এ বাহিনীর দু’জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১১৯ জন সদস্য খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান অর্জন করেন। আমি তাঁদের মহান আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

বিজিবি’র পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী ফজরের নামাজের পর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

এ ছাড়াও কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে পিলখানা সদর দপ্তরের বীর-উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে সকাল ১০টায় বিজিবি দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ। বিজিবি দিবস উপলক্ষে এবার পদক পাচ্ছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রধানমন্ত্রী বিজিবিতে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিজিবির কর্মকর্তা ও সদস্যদের পদক প্রদান এবং বিজিবি সদস্যদের দরবার গ্রহণ করবেন।

দিবসটি উপলক্ষে দুপুরে প্রীতিভোজ এবং সন্ধ্যায় পিলখানাস্থ ঢাকা সেক্টর মাঠে বিজিবি’র নিজস্ব অর্কেস্ট্রা ও শিল্পীসহ দেশের বরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিরাজমান পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ও আস্থা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে আজ বিকালে যশোরের বেনাপোল, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থলবন্দর সংলগ্ন আইসিপিতে বিজিবি-বিএসএফ কর্তৃক জমকালো ‘জয়েন্ট রিট্রিট সিরিমনি’ অনুষ্ঠিত হবে।

বিজিবি দিবস উপলক্ষে এবার চার ক্যাটাগরিতে পদক পাবেন ৬০ জন। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক পাচ্ছেন বিজিবি ডিজিসহ ১০ জন, রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক পাচ্ছেন ২০, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক সেবা পাচ্ছেন ১০ জন এবং রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক সেবা পাচ্ছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামসহ ২০ জন। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে আরো রয়েছেন ব্রি. জেনারেল এ এম এম খায়রুল কবীর ও নাজম-উস সাকিব, কর্নেল মোহাম্মদ আজিজুর রউফ ও মো. মেহেদি হোসাইন কবির, লে. কর্নেল মুহাম্মদ ইসহাক, মোহাম্মদ সুরুজ মিয়া ও শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার, হাবিলদার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নায়েক মো. আনোয়ারুল হক প্রমুখ।

Print Friendly

Related Posts