আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে দশমবারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন তিনি। আর তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দলের ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ। এই পদে কে আসবে, তা নিয়ে ছিল নানা গুঞ্জন। কারণ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার বিকল্প কারো নাম আলোচনায় আসেনি। তাই সভাপতি হিসেবে তার নাম ঘোষণা ছিল আনুষ্ঠানিকতার বিষয় মাত্র। এজন্য সবার নজর ছিল দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদটির দিকে।
এ পদে অনেকের নামই আলোচনায় ছিল। তবে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও আলোচনায় ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ ও আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাসিম, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের মধ্যে কেউ একজন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন।
তবে অবশেষে ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন।
আর এক বছর পরই যেহেতু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে দায়িত্ব পাওয়া নতুন কমিটিকে নির্বাচনী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সেজন্য এবারের সম্মেলনের ভিন্ন মাত্রার গুরুত্ব রয়েছে।
এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদশে গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হয়। সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে: উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।
শনিবার সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দোয়েল চত্বর, রমনা কালী মন্দির গেট ও টিএসসি এবং চারুকলার বিপরীত গেট দিয়ে মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে ঢুকতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। বেলা বাড়ার সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিততে সম্মেলন রূপ নেয় জনসমুদ্রে। সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মৎস্যজীবি লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতি লীগ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সারাদেশের সাংগঠনিক জেলা থেকেও নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত সভাপতি হয়েছেন সাতজন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দলটির সভাপতি হিসেবে সর্বোচ্চ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তিনবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ দুইবার এবং এএইচএম কামারুজ্জামান ও আবদুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন ৭৫ পরবর্তী পরিস্থিতিতে একবার দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদ ‘সাধারণ সম্পাদক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নয়জন। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ চারবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান।
এছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ তিনবার, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুইবার করে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও আবদুল জলিল একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এবার ওবায়দুল কাদের বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন।