বছরের শেষ দিন আজ। বিদায় ২০২২ সাল। জীবনখাতার পাতা থেকে আরো একটি বছর গত’র গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। কোনো অজুহাতে, কোনো পরিস্থিতিতেই সময় ও স্রোতকে থামিয়ে রাখা যায় না। জীবনের গতিপ্রবাহকে বাঁধ দিয়ে ভবিষ্যৎ স্রোতকে রুদ্ধ করা যায় না।
২০১৯ থেকেই মানবসভ্যতা এক কঠিন সময় পাড়ি দিয়ে চলেছে। বৈশ্বিক ক্রান্তিকাল। কখনো মহামারি করোনা। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু। করোনার ধাক্কা শেষ হতে না হতেই যুদ্ধের ধাক্কা। রাশিয়া-ইউক্রেন আঞ্চলিক যুদ্ধ। কিন্তু বৈশ্বিক প্রভাব সারা দুনিয়ায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কুপ্রভাবে সমগ্র বিশ্ব টালমাটাল। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। জনজীবনে নাভিশ্বাস। মানুষের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ ভাবনা বোমার আঘাতে, বারুদের গন্ধে সবকিছু ফিকে হয়ে যাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরু হলেও আজও তার অবসানের কোনো লক্ষণ নেই। কবে ইতি ঘটবে, তাও কারো জানা নেই। এর মধ্যেই জীবন চলছে জীবনের মতো।
রোমান গড ‘জানুস’-এর নামানুসারে ইংরেজি ‘জানুয়ারি’ মাস দিয়ে নতুন বছর শুরু হয়। ‘জানুস’-এর দুটি মুখ। একটি সামনে, একটি পেছনে। মনে হয় সামনের মুখ ভবিষ্যতের, আর পেছনের মুখটি অতীত। মানুষ আসলে অতীতের সব আবর্জনা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সামনের সম্ভাবনাকে ধরতে চায়। মানুষ স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যতের। কোনো মানুষেরই সব স্বপ্ন-সাধ ফেলে আসা বছরে পূরণ হয় না। অপূর্ণ স্বপ্ন, অপূর্ণ বাসনা-অপ্রাপ্তি সব সে পূরণ করতে চায় ভবিষ্যৎকে সামনে রেখে। অনাগত দিন মানুষকে সতত আশাবাদী করে রাখে।
যা হোক, বাংলাদেশ এবার নববর্ষ উদ্যাপন করছে বিশেষ রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্য দিয়ে। ২০২৪-এর জানুয়ারির শুরুতেই জাতীয় সাধারণ নির্বাচন। সেই নির্বাচন ঘিরেই এই উত্তেজনা। বাংলাদেশের মানুষ জানে না, তারা ২০২২-এর মতো ২০২৩-কে বিদায় জানাতে পারবে কি না। বাংলাদেশে একটি প্রবাদ আছে, ‘যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ।’ আমরা যে দিনটাকে বিদায় জানিয়ে যে দিনকে বরণ করে নিই, সে দিনটি বিদায়ী দিনের চেয়ে ভালো হয় না। অর্থাৎ আমরা ক্রমাগতভাবে খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবাই সামনে এগিয়ে যেতে চাই।