আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জেলখানা থেকে ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
শাহ মতিন টিপু: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে পাকিস্তান সরকারের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়েরের
৫৫ তম বার্ষিকী আজ।
১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি দায়ের করা এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, শেখ মুজিব ও অন্যরা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। ৬৮’র ৬ জানুয়ারি এই মামলায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই অভিযোগে আগে থেকেই জেলে আটক থাকা শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি পুনরায় গ্রেপ্তার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সামরিক হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলাটির পূর্ণ নাম ছিলো ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং মামলা’। কিন্তু এটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবেই বেশি পরিচিত। কারণ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা।
মামলাটি দায়ের করার আগে ১৯৬৭ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, রাজনৈতিক এবং সরকারি কর্মকর্তা মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্য থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে ১০০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে তৎকালীন সরকার। শেখ মুজিবুর রহমানকে করা হয় ১ নম্বর আসামি। বাকি ৩৪ আসামির সবাই ছিল সামরিক বাহিনীর সদস্য।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় কথিত ষড়যন্ত্রটি শুরু হয়েছিল। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের ফলে সরকারপ্রধান আইয়ুব খান সমগ্র পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের ফলেই ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের পতন ঘটে। ঐতিহাসিকরা এই মামলা এবং মামলা থেকে সৃষ্ট গণ-আন্দোলনকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনে প্রেরণাদানকারী অন্যতম প্রধান ঘটনা বলে গণ্য করে থাকেন।
বঙ্গবন্ধু তার জবানিতে বলেছিলেন- ‘প্রায় ২১ মাস আটক রাখিবার পর ১৯৬৮ সালের ১৭/১৮ তারিখে রাত ১টার সময় আমাকে তথাকথিত মুক্তি দেওয়া হয় এবং কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক হইতে কতিপয় সামরিক ব্যক্তি দৈহিক বল প্রয়োগ করিয়া আমাকে ঢাকা সেনানিবাসে লইয়া আসে এবং একটি রুদ্ধ কক্ষে আটক রাখে। আমাকে বহির্জগৎ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া নির্জনে রাখা হয় এবং কাহারো সহিত সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। আমাকে খবরের কাগজ পর্যন্ত পড়িতে দেওয়া হইত না, বিশ্ব হইতে সকল যোগাযোগবিহীন অবস্থায় এইভাবে আমাকে দীর্ঘ পাঁচ মাসকাল আটক থাকিতে হয়। এই সময় আমাকে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করিতে হয় এবং আমাকে সকল প্রকার দৈহিক সুযোগ-সুবিধা হইতে বঞ্চিত রাখা হয়। ’
ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের ফলেই ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের পতন ঘটে। এ কারণে এই মামলা এবং মামলা থেকে সৃষ্ট গণ-আন্দোলনকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনে প্রেরণাদানকারী অন্যতম প্রধান ঘটনা বলে গণ্য করা হয়।