সমালোচক ফোর্বসই শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ

মো. সাখাওয়াত হোসেন

 

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিন এ বছর বিশ্বের ১০০ জন ক্ষমতাধর নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে এবং তালিকায় ৪২তম স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফোর্বস ম্যাগাজিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত এবং এটি খুব সুপরিচিত এবং বিশ্বব্যাপী ম্যাগাজিনটির প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে ফোর্বসের প্রকাশিত তালিকা ও তথ্য উপাত্তের একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। গত বছর ফোর্বসের প্রকাশিত ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় ৪৩তম অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা। রাজনীতি ও নীতি শ্রেণিতে এ তালিকায় ২২ জন স্থান পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১১তম স্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার রাজনীতি ও নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতির পুরস্কার হিসেবে তালিকায় যোগ্যতম স্থানে শেখ হাসিনার অবস্থান রয়েছে। শেখ হাসিনার রাজনীতির যে স্থিরতা ও দৃঢ়তা সেটি বিশ্বব্যাপী উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের নিকট আদর্শ হিসেবে বিবেচিত। রাজনীতির মাঠে ব্যক্তি শেখ হাসিনার ত্যাগ ও পরিশ্রমের ফসলই হচ্ছে ফোর্বসই সাময়িকীর মূল্যায়নের মাধ্যমে।

পরিবারের সবাইকে হারিয়ে ১৯৮১ সালে নিস্ব-রিক্ত অবস্থায় সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রবেশ দেশবিরোধী চক্র মেনে নিতে পারেনি। ইত্যবসরে ২১ বার সরাসরি হামলার শিকার হয়ে, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও শেখ হাসিনা রাজনীতিতে অটল অবিচল অবস্থায় পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের নিকট আদর্শ হিসেবে পথ দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে নীতির প্রশ্নে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বিশ্বময়। বিশ্ব ফোরামে শেখ হাসিনার বক্তব্য সর্বজনমহলে সমাদৃত। বৈশ্বিক জলবায়ু আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা, মানবাধিকারের দর্শন প্রতিষ্ঠায়ও তিনি অনন্য। সর্বশেষ, অপরিসীম সাহস ও সততায় বিশ্বব্যাংকের তোয়াক্কা না করে দেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে নীতির জায়গায় শেখ হাসিনার সুসংহত অবস্থান প্রমাণিত হয়েছে। টানা ১২ বছরের শাসনামলে পৃথিবীর বহু প্রতিষ্ঠিত ফোরামে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা হয়েছে এবং বাংলাদেশ বিভিন্ন ফোরামে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তিনি প্রায়শই তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় কাজ করার দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বস ২০০৪ সাল থেকে বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা করে আসছে। তালিকা করার ক্ষেত্রে অর্থ, মিডিয়া, প্রভাব এবং প্রভাবের ক্ষেত্র এই চার বিষয় বিবেচনায় নেয় তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফোর্বস লিখেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে তিনি চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টি পাওয়ায় শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে, যার মধ্যে টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হন। ফোর্বস বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নাগরিকদের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোতে জোর দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। শেখ হাসিনার চলমান সংগ্রাম বাংলাদেশে একটি দৃঢ় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে।

বস্তুত, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে, নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটেছে, শিশু মৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুহার কমেছে। শিক্ষায় নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। শিক্ষায় উপবৃত্তি, বৃত্তি, বিনামূল্যে বই বিতরণ প্রভৃতি বিষয়গুলো সাধারণ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আকৃষ্ট করেছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে এসেছে। জানুয়ারির ১ তারিখে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নতুন বই তুলে দেওয়ার রীতি চালু করেছে সরকার। পাবলিক পরীক্ষায় শতভাগ পাশের হার দেখা যাচ্ছে, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। উল্লেখ করার মত বিষয় হচ্ছে, উচ্চ শিক্ষায় নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রণিধানযোগ্য। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও পদক্ষেপের কারণে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা আইসিটি খাতে আত্ননিয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল গ্রামে গঞ্জেও পৌঁছে গিয়েছে। গ্রাম হবে শহর-এ নীতিতে সরকারের চলমান কার্যক্রমে দেশের মানুষ উপকৃত হচ্ছে এবং দেশও লাভবান হচ্ছে।

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা সরকারের ভূয়সী প্রশংসায় বিশ্ব নেতৃত্ব পঞ্চমুখ। জাতীয় সংসদে স্পীকার, সংসদ উপনেতা, মন্ত্রী পর্যায়ে নারী সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় এবং সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে নারীরা। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সাধারণ নারীদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা প্রদান করছে এবং সংসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখায় সহযোগিতা করছে। নারীদের বিভিন্ন সেক্টরে চাকুরিতে অংশগ্রহণ বেড়েছে এবং বিভিন্ন কর্মমুখী কর্মকান্ডের মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ সবই শেখ হাসিনা সরকারের অবদান এবং অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনা বিভিন্ন জায়গায় সম্মানিত হচ্ছেন, পুরস্কার গ্রহন করছেন।

ব্যক্তি শেখ হাসিনার একক কর্তৃত্ব যে কেবল দল আওয়ামী লীগে রয়েছে বিষয়টি এমন নয়, সরকার প্রধান হিসেবে সরকারের প্রত্যেক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শেখ হাসিনার দায়িত্বশীল নেতৃত্বের প্রভাব। অনেক সময় দেখা যায়, সরকারের কোন কোন বাহিনীর সাথে সরকারের বা সরকার প্রধানের দ্বিমত ও মতভেদ সৃষ্টি হয়ে থাকে সেখানেও কিন্তু শেখ হাসিনা ব্যতিক্রম। ২০০৯ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর অদ্যাবধি শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে কেউই কোনরূপ প্রশ্ন তুলেনি এবং শেখ হাসিনার প্রতি সংশ্লিষ্ট সকলের অনুগত চরিত্রের বহি:প্রকাশ লক্ষ্যণীয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি যে একক আধিপত্য দেখিয়ে চলেছেন তা রীতিমতো বিস্ময়। শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে রাজনীতি থেকে অবসরের বিষয়ে ঘোষণা প্রদান করলেও দলীয় নেতারা শেখ হাসিনার প্রশ্নে তাদের ঐক্যের কথা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের আহবান জানালে কাউন্সিলরগণ শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব গ্রহণের জোর দাবি জানায়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার একক নেতৃত্ব অতুলনীয় ও অনুকরণীয়। বিভিন্ন বিষয়ে শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সক্ষমতাকে বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে সরকার অত্যন্ত সফলতার সাথে করোনার চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করেছে। করোনা মোকাবেলায় সরকারের ঈর্ষণীয় সাফল্য বাংলাদেশের সরকারের সক্ষমতাকে তুলে ধরেছে। করোনা মোকাবেলার সফল অভিজ্ঞতা বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে রসদ যোগাবে। করোনার সময় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের তেমন বেগ পেতে হয়নি, সরকার সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করেছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের। করোনায় সচেতনতা কার্যক্রম চলমান এবং সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আয়োজনের কারণে সেবাগ্রহীতারা সেবা পেয়েছে। করোনাকে অবলম্বন করে যারা ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদান করেছে এবং ভুয়া চিকিৎসা দিয়েছে তাদেরকে সরকার বিচারের আওতায় এনেছে।

এদিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকার গৃহহীনদের জমিসহ বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল। বিশেষ করে এশিয়ার কোন দেশে এমনটি পাওয়া যাবে না, বিশ্ব পরিমন্ডলে এমন নজির খুব বেশি পাওয়া যাবে না। এ ধরনের সাহসী সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার দ্বারাই সম্ভব এবং এমন ‍উপহারের জন্য তিনি মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে বেছে নিয়েছেন। অন্যদিকে দশলাখ ‍নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা যে নজির স্থাপন করেছেন বিশ্ব ইতিহাসে তা বিরল। বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার এ সাহসী সিদ্ধান্তের বিষয়ে সম্পাদকয়ীতে কলাম ছাপা হয়েছে, যৌক্তিকতার মূল্যায়ন হয়েছে। এ সকল কিছুই কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃঢ়তা ও অসীম সাহসের বলেই সম্ভব হয়েছে।

উপরোক্ত বিশ্লেষণ ও নমুনায়নের কারণেই ইতিবাচক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উদাহরণ হিসেবে সকলের কাছে সমাদৃত হচ্ছে। আর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা স্বীকৃতি পাচ্ছেন, সম্মানিত হচ্ছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এ স্বীকৃতি অন্তত এ বিষয়েই সাক্ষ্য প্রদান করে। তবে যারা নারী নেতৃত্ব ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে, তাদের মতে স্বীকৃতির তালিকায় শেখ হাসিনার ক্রমসূচক শুরুর দিকে থাকা বাঞ্ছনীয়। কেননা শেখ হাসিনাকে যে প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে নারীর অধিকার নিশ্চিতে কাজ করতে হয়েছে, নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করতে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গায় প্রতিনিয়ত সততা ও সাহসের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়াই করতে হয়েছে সে বিবেচনায় শেখ হাসিনা অনন্য। কাজেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মূল্যায়ন করতে পারলে ফোর্বস ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে তালিকায় শেখ হাসিনার নাম উপরের দিকেই শোভা পাবে। কারণ, শেখ হাসিনা পৃথিবীর নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত মানুষের কন্ঠস্বর, নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রদূত।

লেখক-সহকারী অধ্যাপক ও সভাপতি, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Print Friendly

Related Posts