বিডিমেট্রোনিউজ ॥ আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্য-সঙ্গীত তথা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। তবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। নজরুল তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্র্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্য ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন।
নজরুল নিয়ে এসেছিলেন দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির বার্তা। বাংলা কবিতায় নজরুলের আর্বিভাব একেবারেই ধুমকেতুর মত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’
‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেবনা ভুলিতে..।’ তিনি আমাদের জাতীয় জীবনে আপন সৃষ্টি কুশলতায় এতটাই মিশে আছেন তাকে ভুলে গেলে আমরাই হয়ে যাব অর্থহীন। কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬/১৮৯৯ ইং পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। পিতার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজী পালোয়ানের মাজারে খাদেম এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন; যা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যে ইসলামী ঐতিহ্যের সার্থক ব্যবহারে এ সম্পৃক্ততা খুব ফলপ্রসূ হয়েছে।
১৯৭২ সালের ২৪ মে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। তার জীবনকাল ৭৮ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর বাণী
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠানমালা
দিনটি উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে কবির ১১৭তম জন্মবার্ষিকী পালন করবে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন কবির জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে চট্টগ্রামে। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাণী
ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক এক বাণীতে বলেছেন, বিদ্রোহী কবির কর্ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে মুক্তি ও সাম্যের পথে অনুপ্রাণিত করেছে। ১৯৪৮ সালে গৃহীত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় বর্ণিত, সকল মানুষ স্বাধীন হয়েই জন্ম নেয় এবং অধিকার ও মর্যাদায় তারা সমান— এ কথা নজরুল লিখেছিলেন অনেক আগেই।