মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের দাবি

মো. শরিফুল ইসলাম

 

মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বর্তমান পেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। ২০০৫-২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছর সময়কে জাতিসংঘ শিক্ষা দশক হিসাবে গণ্য করে। ইউনেস্কো গুণগত শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, উপাদান এবং কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে। এই সংস্থাটি গুণগত শিক্ষাকে টেকসই উন্নয়নে শিক্ষার পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য করে বলেছে Quality education is a prerequisite for education for sustainable development.

২০২৩ সালের নতুন শিক্ষা কাঠামোকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমাদের মন্ত্রণালয়/ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিপত্র অনুসারে আমরা জানতে পারলাম আমাদের বিদ্যালয়গুলো এক শিফটে পরিচালিত হবে সেটাকেও সাধুবাদ জানাই। তবে বিদ্যালয়গুলো এক শিফটে রুপান্তর করার জন্য নতুন নতুন দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো উন্নয়ন, সহকারি শিক্ষক পদ সংখ্যা, ন্যূনতম ৮ জন, সহকারি প্রধান শিক্ষক, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক, অফিস কাম-কম্পিউটার অপারেটর/ অফিস সহকারি ও দপ্তরীর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।

আমাদের বিদ্যালয়ের কমলমতি শিক্ষার্থীরা আস্তে আস্তে যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। তাদের ভিতরে খেলাধুলার স্পৃহা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সকল ৯ টায় শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ছুটির আগ পর্যন্ত একটানা ক্লাস করতে হচ্ছে। তাদের মুখের দিকে তাকালে নিজেদেরকে অসহায় মনে হয়। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যেখানে বলেছেন শিশুদের বইয়ের চাপ কমাতে হবে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন সকল শ্রেণির প্রতিদিন এক পিরিয়ড করে খেলাধুলার সুযোগ দেওয়ার। শিক্ষার্থীরা বিকাশিত হবে আনন্দের মাধ্যমে।

যতদিন বিদ্যালয়গুলো এক শিফটে পরিচালিত না হবে ততদিন পর্যন্ত দুই শিফট পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো গ্রীষ্মকালীন ৯টা-৪টা এবং শীতকালীন ৯টা-সাড়ে ৩টা পর্যন্ত করার আবেদন জানাচ্ছি।

একজন শিক্ষকের পক্ষে ৮টা থেকে ১২টা ক্লাস নেওয়া কষ্টকর। কোনো শিক্ষক ৫টি ক্লাস নেওয়ার পর যখন ক্লাস নিতে যায় তখন তার ভিতরে কোন সৃজনশীল শক্তি থাকে না। ফলে ক্লাসগুলো অধিকাংশ যান্ত্রিক হয় এবং শিক্ষার্থীরা পাঠের প্রতি অমনোযোগি হয়ে পড়ে। তাই শিক্ষকের প্রতিদিনের ক্লাসের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪টি করার আবেদন জানাচ্ছি।

মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার অনেক অপরিহার্য পূর্বশর্তের মধ্যে একটি হচ্ছে- অধিক বিনিয়োগ। আমাদের দেশ উন্নয়নশীল হওয়ার সত্ত্বেও শিক্ষাখাতে অর্থ বরাদ্দ অপর্যাপ্ত। তাই সরকারের কাছে আবেদন শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সর্বোচ্চ বরাদ্ধ দেওয়ার। উন্নয়নের জন্য শিক্ষা বিষয়টি আজ বিশ্বজনীন। যেহেতু উন্নয়নের প্রধান অনুসঙ্গ হচ্ছে শিক্ষা। আর সকল স্তরের শিক্ষার ভিত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। তাই প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই।

প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে Mingat বলেন, যদি কোনো দেশের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ আর একটি দেশের চেয়ে ৯০% বেশি থাকে তাহলে ৩০ বছর পর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অন্তত ৭৫% বেশি হয়।

ইউরোপ, আমেরিকার কথা বাদই দিলাম। আমরা যদি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জাপান, দক্ষিণকোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালায়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পিছনে রয়েছে শক্তিশালী প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। বিশ্বব্যাংক ৮টি দেশকে HAPE (High performing Asian economics) বলে আখ্যায়িত করেছেন।

তাই মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো, শিক্ষার্থী বান্ধব পরিবেশের পাশাপাশি শিক্ষকের পদমর্যাদা বৃদ্ধির আবেদন জানাচ্ছি।

সহকারি শিক্ষকদের ১০ গ্রেড, প্রধান শিক্ষকের প্রশাসনিক পদ হিসাবে ৯ গ্রেড, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভূক্ত করার আবেদন জানাচ্ছি।

সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের প্রাথামিক বিদ্যালয়ে পড়ার আবেদন জানাচ্ছি।

এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা। ইনশাল্লাহ আগামী ২০ বছরের মধ্যে আমরা HAPE ভূক্ত দেশের কাতারে অন্তর্ভূক্ত হব। সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

লেখক: প্রধান শিক্ষক, ৫৪নং কৃষ্ণকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালা, সাতক্ষীরা।

Print Friendly

Related Posts