স্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে তামাক চাষ বন্ধ করা যাবে। চাষীদের হয়তো কিছু প্রণোদনা দিতে হবে। এসব জমিতে ধান, গম ও ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, তামাক উৎপাদক, সেবক, ব্যবসায়ী সবাই স্বীকার করে যে তামাক মানুষ, জীববৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। তারপরও ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। মানুষের জীবন রক্ষার্থে তামাক বন্ধ করতে হবে। জেনেশুনে বিষপান করেও তামাক ছাড়ছে না বরং মৃত্যুবরণ করছে।
রবিবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আহ্ছানিয়া মিশন অডিটোরিয়ামে ‘পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন আরও বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও বাস্তবায়নে সর্মাত্মক সহযোগিতা করবে তার মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী বলেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে তামাকপান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা চাষীদের তামাক থেকে বের করতে আনতে পারলে সফলতা পাওয়া সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, তামাকের কারণে বৃক্ষ নষ্ট হচ্ছে। তামাক চাষীরা গাছ লাগিয়ে সেই গাছ দিয়েই তামাক পোড়াচ্ছে। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে গাছকাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের বনায়ন আছে ১৭ শতাংশ, সেটি ২৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। চলতি বছর থেকেই তামাক চাষ বন্ধে কার্যক্রম শুরু করতে পারি। ২০২৪ সালে গিয়ে পরিপূর্ণভাবে সফল হবো।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের আয়োজনে ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (সিটিএফকে) সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কাজী জেবুন্নেসা বেগম বলেন, সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে নিকোটিন টেস্টের আওতায় আনতে হবে।
পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, তামাক জাতীয় ও পারিবারিক অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করে থাকে। ব্যক্তিটি মারা গেলে পারিবারিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও ক্ষতির সৃষ্টি করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যায়। অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
তামাক কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সে সম্পর্ক বলেন, আগে সিগারেট তিন স্তরে ছিল। পরে এটি চার স্তরে হয়। আন্দোলনের ফলে এক স্তরে নামিয়ে আনা হয়। বর্তমানে ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। ব্রিটিশ ও জাপান টোবাকো অনেক ভ্যাট দেয় বলে সরকার এটি বন্ধ করছে না। দুটি প্রতিষ্ঠানে সরকারে ১ শতাংশের কম মালিকানা আছে। এটি বাদ দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের হেলথ এন্ড ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ।
তিনি জানান, এক কেজি তামাক পোড়াতে প্রয়োজন ১২ কেজি কাঠ। আর ৩০০ সিগারেটের জন্য কাটা হয় একটি গাছ। আর একটি সিগারেট উৎপাদনে ব্যয় হয় ৩.৭ লিটার পানির।
প্রবন্ধে বলা হয়, তামাক থেকে রাজস্ব আসে বছরে ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা আর স্বাস্থ্যজনিত ক্ষতি হয় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নীট ক্ষতিই হচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকা।
ইকবাল মাসুদ বলেন, পরিবেশ দূষণে বিশ্বের শীর্ষে তামাকের ফিল্টার। বছরে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ব্যবহৃত সিগারেটের ফিল্টার আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া হয়। এগুলো প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে সময় নেয় ১০ বছর। বছরে ৪০ হাজার ৪৯০ টন বাট ও প্যাকেটে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে থাকে। তামাকের বর্জ্যদূষণ থেকে বছরে মোট ৮৪ মিলিয়ন কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। পরোক্ষভাবে ৩ কোটি ৮৪ হাজার ধূমপান না করেও ক্ষতির শিকার হয়। বাংলাদেশে ৩১ শতাংশ বন উজাড় হচ্ছে তামাক চাষে। আর তামাকের পাতা শুকাতে বছরে ৮৫ হাজার মেট্রিক টন জ¦ালানি কাঠ পোড়ানো হয়। বিশে^ তামাক চাষ ও পাতা পোড়াতে ২ লাখ হেক্টর বন ধ্বংস হচ্ছে।
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মিশনের নির্বাহী পরিচালক সাজেদুল কাইয়ূম দুলাল।এ ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স, বাংলাদেশ-এর লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কাজী শরীফুল আলম।