রাষ্ট্রভাষা উর্দুর ঘৃণ্য ঘোষণাটি এসেছিলো জানুয়ারিতেই

শাহ মতিন টিপু

 

ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের অমলিন স্মৃতি স্মরণের মাস। কিন্তু এর পটভূমি সৃষ্টি হয়েছিলো জানুয়ারিতে।

‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও এর বীজ রোপিত হয়েছিলো আগের মাসেই।

১৯৫২ সালের ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় ছিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাউন্সিল। প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এসেছিলেন সেই কাউন্সিল উপলক্ষ্যে। ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের গুণকীর্তন ও সরকার পূর্ব বাংলার জন্য কী কী করেছে তা উল্লেখ করে বক্তৃতা করেন তিনি। শেষ পর্যায়ে তিনি ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। পাকিস্তানকে আমরা ইসলামি রাষ্ট্ররূপে গঠন করতে যাচ্ছি।’

কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দোহাই দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রদেশের ভাষা কী হবে তা প্রদেশবাসীই স্থির করবেন, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। একাধিক রাষ্ট্রভাষা থাকলে কোনো রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে একুশটি কেন্দ্রে বাংলাভাষাকে আরবি হরফে লেখার প্রশিক্ষণ সফল হয়েছে এবং জনগণ নিজ উদ্যোগে নতুন কেন্দ্র খুলছে।’

পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণায় পূর্ব বাংলায় জাগে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি। তাই বাংলাভাষার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে নিহত হন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেকে।

এরপর পথ পরিক্রমায় রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা।

Print Friendly

Related Posts