রাজশাহী প্রতিনিধি: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির জয়ের আশা নেই, মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে বিএনপি ডান, বাম, অতিবাম, অতিডান- সবাই মিলে ঐক্য করেছিলো। তারপর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলো। সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করে বিএনপির আসনসংখ্যা ৬টি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর দেশে আরও উন্নয়ন হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও তাদের আশা নেই। তাই নানা বাহানা উপস্থাপন করছে। নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা বলে না? বিএনপির অবস্থা হয়েছে তাই।’
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী নগরীর কুমারপাড়ায় নগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। আমরা চাই, সমস্ত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসুক। বিএনপি পূর্ণ শক্তি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, সেটাই চাই। তারা গতবার সব দল নিয়ে জোট করেছিলো, এবারও জোট করে অংশগ্রহণ করুক। আমরা খেলে জিততে চাই। বিএনপির সাথে খেলেই আমরা জিততে চাই। যেভাবে জিতেছি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ২০১৪ সালে যে সহিংসতা করেছিল, এবার সেটির সুযোগ পাবে না। আমরা ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের মোকাবিলা করেছি। এবারও অপচেষ্টা চালালে জনগণ তাদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন সরকারের অধীনে হয় না। নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তফসিল ঘোষণার পর সরকারের একজন ওসি, ইউএনও কিংবা দারোগা বদলি করার ক্ষমতাও থাকে না। এ সমস্ত চাকরি সবগুলো নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত হয়। সরকার শুধুমাত্র রুটিন কাজ করে। পৃথিবীর কোথাও এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই, আছে শুধু পাকিস্তানে। বিএনপি তো পাকিস্তানকে অনুকরণ করে। আমাদের দেশে ভোট হবে সেইভাবে, যেভাবে অস্ট্রেলিয়ায় হয়, ইন্ডিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কন্টিনেন্টাল ইউরোপ, জাপানে হয়- সেভাবে হবে। সেখানে যখন ভোট হয়, সরকার রুটিন কাজ করে। তাদের অধীনে নির্বাচন হয় না। আমাদের দেশেও তাই হবে।’
ইভিএমে ভোট প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ইভিএম চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, কন্টিনেন্টাল ইউরোপে ইভিএমে ভোট হয়। আমাদের দেশ প্রযুক্তির সাথে সঠিক সময়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটেই আমাদের দাবি ছিল, যেন ইভিএমে ভোট হয়। ইভিএমে ভোট মানে, ওই যে জিয়া আমলে শ্লোগান ছিল- “১০টি হোন্ডা, ২০টি গুন্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা”- এটা জিয়ার সময়ের, এরশাদ সাহেবের সময়ের, খালেদা জিয়ার আমলের স্লোগান। ইভিএম হলে এই স্লোগান কারও দেওয়ার সুযোগ নেই। সেই জন্যই আমরা দাবি দিয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই ইভিএম। যে আধুনিক যন্ত্র দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোট হয়। এতে কারচুপি করার সুযোগ নেই। কিন্তু ইভিএম কিনতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন পৌনে ৯ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছিলো। অর্থাৎ এক বিলিয়ন ডলারের একটি প্রস্তাব। এ টাকায় ইভিএম মেশিন আমদানি করতে হবে। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই সময়ে এত বড় প্রকল্প পাস করে ইভিএম কেনা সমীচিন নয়। বিশ্বমন্দার মধ্যে মানুষের অন্য কল্যাণগুলো আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে। সে জন্য আমরা ইভিএম চাইলেও বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন যত আসনে ইভিএম করুক, আমরা সেটি মেনে নেব। কারণ, মানুষের কল্যাণই আমাদের কাছে প্রাধান্য পায়।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান, মেরিনা আখতার কবিতা, মাগুরার এমপি সাইফুজ্জামান শিখর, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, জেলার সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলন পরিচালনা করেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।