তিরুপতি মন্দিরে প্রতি বছর জমা পড়ে কয়েকশ টন চুল, কী হয় এই চুলের?

তিরুপতি মন্দির, ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের চিত্তুর জেলার অন্তর্গত তিরুপতির তিরুমালা শৈলশহরে অবস্থিত একটি অন্যতম প্রধান বিষ্ণু মন্দির। এই মন্দিরের প্রধান উপাস্য দেবতা হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর অবতার বেঙ্কটেশ্বর। তিরুমালা বেঙ্কটেশ্বর মন্দির তিরুপতি মন্দির, তিরুমালা মন্দির ও তিরুপতি বালাজি মন্দির নামেও পরিচিত।প্রতি দিন হাজার হাজার পুণ্যার্থী ভিড় জমান তিরুপতি মন্দিরে। পুজো দেন। ইচ্ছাপূরণ হলে চুল কাটিয়ে দান করেন ভক্তেরা। আর এই চুল বিক্রি করেই বছরে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।

কারা কেনেন এই চুল? কী ভাবে চলে বেচাকেনা? দেশে তিরুপতি মন্দিরে ভক্তরা সব থেকে বেশি চুল দান করেন। তার কারণও রয়েছে। বলা হয়, এই মন্দিরে ভক্তরা যত চুল দেন, ঈশ্বর তার ১০ গুণ বেশি সম্পত্তি ফিরিয়ে দেন তাঁকে।

কথিত রয়েছে, তিরুপতি মন্দিরে চুল দিলে সন্তুষ্ট হন লক্ষ্মী। তাই এখানে শুধু পুরুষ নন, মহিলারাও ইচ্ছাপূরণ হলে চুল দান করেন।

চুলদান নিয়ে অন্য একটি গল্পও প্রচলিত রয়েছে। বলা হয়, অতীতে বালাজির মূর্তির উপর পিপঁড়ের পাহাড় তৈরি হয়েছিল। একটি গরু রোজ এসে ওই পিঁপড়ের পাহাড়ে দুধ দিত। এক দিন দেখতে পেয়ে খুব রেগে যান গরুর মালিক। কুঠার দিয়ে গরুর মাথায় আঘাত করেন।সেই আঘাত লাগে বালাজির মাথায়। রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আঘাতে বালাজির মাথার চুল ঝড়ে পড়ে। দেখে নীলাদেবী নিজের চুল কেটে সেই ক্ষতের উপর জড়িয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে বালাজির আঘাত সেরে যায়।

দক্ষিণ ভারতে বিভিন্ন মন্দিরে রয়েছে নীলাদেবীর মূর্তি।নীলাদেবীর এই পদক্ষেপে নারায়ণ খুশি হন। জানান, মহিলাদের শরীরের সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল চুল। সেই চুলই তাঁর জন্য কেটে ফেলেছেন নীলাদেবী। মনে করা হয়, সেই কারণেই তিরুপতি মন্দিরে চুল দিলে ইচ্ছাপূরণ হয়।

প্রতি বছর লক্ষ টন চুল দেওয়া হয় তিরুপতি মন্দিরে। পরিসংখ্যান বলছে, বছরে ৫০০ থেকে ৬০০ টন চুল দেন ভক্তেরা। তার পর কী করা হয় সেই চুল দিয়ে?

মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, কেটে ফেলা চুল প্রথমে গরম জলে ফোটানো হয়। তার পর তা সাবান দিয়ে ধুয়ে শুকানো হয়। তার পর একটি গুদামে ভরে রাখা হয়। সেই গুদামের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে।

বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে চুল সংরক্ষণ করা হয়। প্রথম ভাগে পড়ে ২৭ ইঞ্চির বেশি দৈর্ঘ্যের চুল। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে ১৯ থেকে ২৬ ইঞ্চি দীর্ঘ চুল। তৃতীয় ভাগে রয়েছে ১০ থেকে ১৮ ইঞ্চি লম্বা চুল। চতুর্থ ভাগে রাখা হয় পাঁচ থেকে ন’ইঞ্চি লম্বা চুল। পাঁচ ইঞ্চির কম দৈর্ঘ্যের চুল রাখা হয় পঞ্চম ভাগে।

একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, প্রথম ভাগের চুল কেজি প্রতি প্রায় ২,৯০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হয়। দ্বিতীয় ভাগের চুল বিক্রি হয় ২,৬০০ টাকা কেজি দরে। আর পঞ্চম ভাগের চুল বিক্রি হয় কেজি প্রতি ৩৬ টাকা দরে।

সেই চুল অনলাইনে নিলাম করা হয়। নিলাম করে তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম। আর তা করে কোটি কোটি টাকা আয় করেন কর্তৃপক্ষ। বিক্রি হয় চীন, আমেরিকা-সহ ইউরোপ, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। এই চুল দিয়ে তৈরি হয় উইগ।

তিরুপতি মন্দিরে ভক্তদের চুল কামানোর জন্য নিযুক্ত ৬০০ জন। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি দিন ২০ হাজার ভক্ত এসে এখানে চুল কামান।

একটি সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, তিরুপতিতে প্রত্যেক ভক্তর মাথা কামানোর জন্য নাপিতেরা পান ১১ টাকা। মাসে তাদের মেরেকেটে রোজগার আট হাজার টাকা। ভক্তেরা খুশি হয়ে অনেক সময় তাদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে থাকেন। নাপিতদের অভিযোগ, সেই টাকা নিয়ে নেন মন্দিরের নিরাপত্তারক্ষীরা।

একটি সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছিল, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তিরুপতি মন্দির কর্তৃপক্ষ ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৯০০ কেজি চুল বিক্রি করেছিলেন। অনলাইনে সেই চুল নিলাম করে পেয়েছিলেন ১১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা। প্রতি বছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আয় করেন তিরুপতি মন্দির কর্তৃপক্ষ।

সূত্র: আনন্দবাজারপত্রিকা

Print Friendly

Related Posts