হাসান আজিজুল হকের ৮৫তম জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু

 

হাসান আজিজুল হক বাংলা ভাষার অন্যতম একজন প্রধান কথাসাহিত্যিক। ষাটের দশকে আবির্ভূত এ কথাসাহিত্যিক তার সুঠাম গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ। ষাটের দশকে তিনি কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। আগুনপাখি (২০০৬) তার রচিত শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এই গদ্যকারের ৮৫তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ দোয়া বখশ্ এবং মা জোহরা খাতুন। জীবনের অধিকাংশ সময় রাজশাহীতে কাটিয়েছেন হাসান আজিজুল হক।

১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৬ সালের খুলনার ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যৌবনে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। রাজনীতি করার কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতন ভোগ করেন। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দর্শনে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন হাসান আজিজুল হক। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

লেখক হিসেবে নিজেকে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর শিক্ষাজীবন থেকেই তিনি সক্রিয় সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। যদিও দর্শনশাস্ত্রে পড়াশোনা শেষে অধ্যাপনাকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন।

হাসান আজিজুল হক ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজ অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন।

২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের জন্য মনোনীত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন এ খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক। ২০১৪ সালের আগস্টে তিনি বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন।

তার সৃষ্টিসম্ভার অনেক বিশাল। মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংগ্রামী চেতনা এবং সমকালীন যুগযন্ত্রণার নিরুচ্ছ্বাস আর্তি তার সাহিত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। এরপর ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘মা মেয়ের সংসার’ ইত্যাদি গল্পগ্রন্থে তিনি সাহিত্য প্রতিভার অনন্য স্বাক্ষর রেখেছেন। উপন্যাস, প্রবন্ধ, দর্শনশাস্ত্র, নাটক এবং শিশুসাহিত্যেও রয়েছে তাঁর অসামান্য অবদান। ‘কথাসাহিত্যের কথকতা’, ‘অতলের আঁধি’, ‘অপ্রকাশের ভার’ তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থ।

সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭০ সালে হাসান আজিজুল হক বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। পরবর্তীতে একুশে পদকসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।

তিনি ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটির (বিহাস) বাসভবনে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর। পরদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনেই জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিককে সমাহিত করা হয়।

 

Print Friendly

Related Posts