বসন্তের প্রথম দিন, ভালোবাসার দিন

শাহ মতিন টিপু: আজ পহেলা ফাল্গুন। আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। হরেক রকমের বাহারি ফুল ও পত্রপল্লবে প্রকৃতি আজ বর্ণিল। বসন্তের মাতাল সমীরণে টকটকে লাল রাঙা পলাশ প্রকৃতিতে নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করছে।

কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথায়- ‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে, শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায়, ফাল্গুনী মোর মন বনে’। আসলে বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। বসন্তে গাছে গাছে নতুন পাতা আসে। ডালে ডালে কোকিল। রঙিন ফুলে প্রকৃতি সুশোভিত হয়ে ওঠে। এই সময়ে বাতাসে ফুলের রেণু ছড়ায়। প্রকৃতি হয়ে উঠে অপরুপ।

অন্যদিকে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিনটি মূলত সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবস। যাকে ভালোবাসা দিবস নামে আখ্যা দেওয়া হয়। তবে দিবসটির পেছনে জড়িয়ে আছে একজন মানুষ। তার নাম সেইন্ট ভ্যালেনটাইন।

ঘটনাটি ১৭৫৪ বছর পুরনো। ২৬৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয়েছিল সেইন্ট ভ্যালেনটাইনকে। দিনটি মূলত তার মৃত্যুবার্ষিকী। ভ্যালেন্টাইন ছিলেন তৎকালীন রোম সাম্রাজ্যের একজন খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক৷ ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দি করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দি অবস্থায় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। তাই তার প্রতি ইর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।

৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও প্রথম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন।

আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় দিবসটি। এ দিনে পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো ভালোবাসার মানুষে পরিপূর্ণ থাকে। বসন্ত উৎসবটি বাঙালির সব বয়সির হলেও এতে তারুণ্যের প্রভাবই থাকে বেশি। এ দিনটিতে তরুণ-তরুণীরা বাসন্তী রঙের পোশাকে নিজেদের সজ্জিত করে। ফুল বিনিময় ও ব্যবহারের ধুম পড়ে যায়। তবে এ সময়ে এই ধরনের আয়োজন গ্রামাঞ্চলের পরিবর্তে শহরাঞ্চলেই বেশি পরিলক্ষিত হয়।

তাই ফাল্গুনের প্রথম দিনে ভালোবাসার উচ্ছল আনন্দ চারদিকেই রঙ ছড়াবে আজ। তারুণ্য মেতে ওঠবে বসন্ত উৎসবে। রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে সেই তারুণ্যের সুবাস ছড়িয়ে পড়বে শাহবাগ, রমনা বটমূল, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে রাজধানীর পুরো শরীরে। এমন কি শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে নিভৃত পল্লীর ধুলোমাখা পথেও। দিনটিকে আরো উপভোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি।

বসন্ত যেমন আমাদের খুশির ঋতু; তেমনি বেদনারও বটে। ফাগুনে শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ মনে করিয়ে দেয় বায়ান্নর ফাগুনের শহীদদের কথা। ফাল্গুন মনে করিয়ে দেয় ভাষা শহীদের রক্তের ইতিহাস। এই মাসেই উদযাপন করা হবে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। তাই, ফাল্গুনের সাথে মিশে আছে আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসও।

এদিকে আজ এ উপলক্ষে ‘বসন্ত উৎসব ২০২৩’ এর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বিকাল ৪টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সংগীত, কবিকন্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, নৃত্য, বসন্তের পোষাক প্রদর্শনী ও কোরিওগ্রাফির নান্দনিক আয়োজন করা হয়েছে।

একাডেমি সূত্র জানায়, নব ফাল্গুনের এই বর্ণিল উৎসবে বিশেষ আয়োজন হিসেবে সকল নারী দর্শকদের মাথায় ফুলের রিং ও পুরুষদের হাতে ফুলের মালা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। উপস্থিত দর্শদের মধ্যে সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হবে।

 

Print Friendly

Related Posts